বিশ্বের দুই শীর্ষস্থানীয় বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং এপি মুলার-মায়ারস্ক বাংলাদেশের শিপিং শিল্পে বড় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বঙ্গোপসাগরের উপকূলে নতুন বন্দর নির্মাণ এবং বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে চায়।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সামিট চলাকালে ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম ও এপি মুলার-মায়ারস্কের চেয়ার রবার্ট মায়ারস্ক উগলা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং এ প্রস্তাব দেন।
ডিপি ওয়াল্ডের সিইও জানান, তারা চট্টগ্রাম বন্দরের কনজেশন কমাতে এবং দূষণ হ্রাসের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা বাড়াতে নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে চান।
সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক এই লজিস্টিক কোম্পানির সিইও জোর দিয়ে বলেন, নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ বাংলাদেশকে আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এবং দূষণ কমাতে সহায়তা করবে।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের সিইও উল্লেখ করেন, তারা ২০২২ সালেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন, তবে তখনকার সরকার তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি ডিজিটাল অনলাইন কাস্টমস প্রক্রিয়া চালু করতে চান, যা দুর্নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করবে। তারা বাংলাদেশে ইনলাইন কনটেইনার ডিপোতেও বিনিয়োগ করতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েমকে জানান, বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও দক্ষ করতে চায় এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আরও বন্দর নির্মাণ করতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এটা করতে হবে কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। আমরা অঞ্চলটিকে বৃহত্তম বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়াতে চায়, কারণ দেশটি মনে করে এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যসমূহ, নেপাল এবং ভুটানের মতো দেশের কনটেইনার পরিচালনার জন্য একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে কারণ সময়েরও একটা মূল্য রয়েছে,
ডেনমার্কভিত্তিক এপি মুলার মায়ারস্ক চেয়ার রবার্ট মায়ারস্ক উগলা জানান, তারা চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে চান এবং তাদের কারিগরি সহায়তায় এটিকে একটি সবুজ বন্দর হিসেবে রূপান্তরিত করতে চান।
রবার্ট মায়ারস্ক উগলা বলেন, তারা মরক্কো এবং ওমানেও একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তাদের বিনিয়োগের মাধ্যমে ওমানের সালালাহ বন্দর বিশ্বের সেরা বন্দরের একটি হয়ে উঠেছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান উগলা।
প্রধান উপদেষ্টা ডিপি ওয়ার্ল্ড ও এপি মুলার-মায়ারস্কের কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বঙ্গোপসাগরের উপকূলে একাধিক বন্দর নির্মাণ করতে হবে, যেন আমরা একটি আঞ্চলিক ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে আমাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহার করতে পারি এবং বাংলাদেশি বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানান।
