Dianta-News-PNG
ঢাকা শনিবার- ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫শে মাঘ ১৪৩১, ৮ই শাবান ১৪৪৬ ভোর ৫:৪৯

১৩ হাজার বছরের পুরনো থ্রিডি মানচিত্র বেরোলো ফ্রান্সে

দিগন্ত নিউজঃ
জানুয়ারি ২৩, ২০২৫ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এক নতুন আবিষ্কার উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, এটি বিশ্বের প্রাচীনতম থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক মানচিত্র হতে পারে, যেটি প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে প্যালিওলিথিক যুগের মানুষেরা তৈরি করেছিলেন। বেলেপাথরে খোদাই করা এ বিস্ময়কর আবিষ্কারটি থেকে ইঙ্গিত মেলে, আদিম মানুষ তাদের আশপাশের পরিবেশ বোঝা ও সেটা ছবির মতো করে তুলে ধরার ক্ষেত্রে কতটা উন্নত ছিলেন।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অক্সফোর্ড জার্নাল অফ আর্কিওলজি’তে, যেখানে গবেষকরা তুলে ধরেছেন আমাদের আগের পূর্বপুরুষদের মেধা ও সৃজনশীলতাকে।

এ আবিষ্কারের সন্ধান মেলে ফ্রান্সের ‘প্যারিস’ বেসিনের ‘সেগোগনোল ৩’ বেলেপাথরের মেঝেতে। এ স্থানটি ১৯৮০ এর দশক থেকে বিভিন্ন শৈল্পিক খোদাইয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। যার মধ্যে রয়েছে দু’টি ঘোড়ার ছবি ও এক নারী রূপের মূর্তি।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পাথরের মেঝেতে আশপাশের ভূদৃশ্যের একটি ক্ষুদ্র মডেল। যার মধ্যে পানিপ্রবাহ, উপত্যকা ও হ্রদের মতো বৈশিষ্ট্য খোদাই করা হয়েছে।

এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘মাইনস প্যারিস—পিএসএল সেন্টার অফ জিওসায়েন্সে’-এর ড. মেডার্ড থিরি। এতে অবদান রেখেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাডেলেইড’-এর ড. অ্যান্টনি মিলনেস।

তাদের এসব অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, প্যালিওলিথিক যুগের মানুষরা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ ও অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের অনুকরণে বেলেপাথরের মেঝেতে এর খোদাই করেছিলেন।

ড. মিলনেস বলেছেন- আমরা যা বর্ণনা করেছি তা আজকের সময়ের মানচিত্র নয়। এখানে দূরত্ব, দিক বা ভ্রমণের সময় দেখায় না। এর বদলে আশপাশের ভূদৃশ্য কীভাবে কাজ করে অর্থাৎ কোথায় পানি প্রবাহিত হয়, কোথায় স্রোত একসঙ্গে এসে মিশেছে ও কীভাবে হ্রদ বা জলাভূমি গঠিত হয় এর একটি ত্রিমাত্রিক উপস্থাপনা এই বেলেপাথরের খোদাই।
13,000-year-old 3D map discovered in France

মিলনেস আরও বলেন- আমাদের গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, আদিম মানুষ খুব পরিশীলিত উপায়ে তাদের আশপাশের ভূমির চেহারা পরিবর্তন করতে পারত। এই আবিষ্কার তাদের উন্নত মানসিক ক্ষমতা ও সৃজনশীলতাকেই তুলে ধরেছে।

প্যালিওলিথিক মানুষের জন্য পানির প্রবাহ বোঝা ও ভূমির মূল বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে স্বীকৃতি দেওয়া তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

আদিম মানুষেরা সম্ভবত সুপেয় পানি খুঁজে বের করতে, শিকার করতে ও তাদের পরিবেশে চলাচলের জন্য এ ধরনের জ্ঞানের উপর নির্ভর করত।

ড. থিরি বলেছেন, বৃষ্টির পানির প্রবাহকে প্রমোট করার জন্য বেলেপাথরটিতে খোদাই করেছিল। আর এটি এমন পথ তৈরি করেছিল, যা এই পানির প্রবাহকে নির্দিষ্ট অঞ্চলে নিয়ে যাবে। এ বৈশিষ্ট্যের পেছনের মানে সম্ভবত আমাদের বোঝার বাইরের বিষয়। তবে যারা এগুলো তৈরি করেছেন তাদের জন্য এটি স্পষ্টতভাবেই গভীর গুরুত্ব রেখেছিল।

বেলেপাথরটি পরীক্ষা করে গবেষকরা বলছেন, আদিম মানুষের এমন কাজ কোনও এলোমেলো ভাবনা থেকে আসেনি।

এ আবিষ্কারের আগে পৃথিবীর প্রাচীন পরিচিত ত্রিমাত্রিক মানচিত্রটি ছিল প্রায় তিন হাজার বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগে খোদাই করা এমন এক শিলাস্তম্ভ যা বহন করা যায়। সেই মানচিত্রে স্থানীয় নদী ব্যবস্থা ও ঢিবি খোদাই করা হয়েছিল, যা ছিল আরও আধুনিক নেভিগেশন যন্ত্রপাতির মতো। তবে মানচিত্র তৈরির সময়রেখাকে ১০ হাজার বছর পেছনে ঠেলে দিয়েছে ফ্রান্সের নতুন এই আবিষ্কার।

এ ধরনের আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রত্নতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব ও ভূ-রূপবিদ্যার মতো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন গবেষকরা।

ড. মিলনেস বলেছেন- বিভিন্ন শাখা থেকে জ্ঞান একসঙ্গে করার মাধ্যমেই সেরা ধারণাটি পাওয়া যায়। নতুন কৌশল ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গে এসব স্থান নিয়ে পুনরায় বিবেচনা ও অতীতের বিভিন্ন আবিষ্কারকে ফের ব্যাখ্যা করাও গুরুত্বপূর্ণ।

দিগন্ত নিউজ/নয়ন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দিগন্তনিউজ.কম ’এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি- আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন Gmail Icon ঠিকানায়।
আজকের সর্বশেষ সবখবর
  • আপনার এলাকার খবর খুঁজুন

    খুঁজুন