বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে ভালো চোখে দেখছেন না ইসলামী আন্দোলনের আমির, চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম; সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিরোধিতা করার কারণেও বিএনপির সমালোচনা করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের যুব সংগঠন ‘ইসলামী যুব আন্দোলনের’ কনভেনশনে বিএনপি নেতাদের উদেশ করে রেজাউল করিম বলেন, “আপনারা মনে করেন আপনারা অনেক তালগাছ হয়ে গেছেন। আসলে আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নাই।”
সমাবেশ থেকে যুব আন্দোলনের ২০২৫ সালের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। আতিকুর রহমান মুজাহিদকে সভাপতি ও মানসুর আহমেদ সাকিকে সেক্রেটারি জেনারেল ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করিম।
সমাবেশে আসা বাসগুলোর কারণে শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন সড়কে যান চলাচল একরকম বন্ধ হয়ে যায়। যুব আন্দোলনের সভাপতি নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল।
এ সমাবেশ সামনে রেখে কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি চলছিল। শুক্রবার দুপুর নাগাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। গণপূর্ত অধিদপ্তর সমাবেশের অনুমতি বাতিল করলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকই তা করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন ও যুব আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু বক্তব্য দেন।
রেজাউল করিম বলেন, “গত ৫৩ বছর যারা দেশ চালিয়েছে। তাদের মানুষকে নতুন করে উপহার দেওয়ার মত কিছু নাই, নতুন কোনো কথা নাই। গ্রামে একটা কথা আছে গোদা পা দিয়ে লাথি মারলে শক্তি থাকে না। এটা আমাদের জানা হয়ে গেছে। আপনারা দেশ ৫৩ বছর পরিচালনা করেছেন, তাতে আমাদের কী দিয়েছেন? নতুনভাবে ওই পা দিয়া ভয় দেখাইয়া আর লাভ নেই।”
বিএনপির উদ্দেশ্যে মুফতি রেজাউল বলেন, “যারা নাকি নির্বাচন করতে অস্থির হয়ে গেছেন। পিআর নির্বাচন (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পছন্দ করছেন না। আমি বলব মানুষ সজাগ হয়েছে। জরিপ করে দেখেন। আপনাদের পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে। এখন বাংলাদেশে এই চাঁদাবাজদের, এই দখলকারী, খুনীদের বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না। পরিবর্তন করতে হবে।”
বিএনপি আওয়ামী লীগকেও নির্বাচনে চায়– এমন ইংগিত করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, “যারা হাজার মায়ের কোল খালি করেছে, তাদেরকে আবার নির্বাচনের জন্য আহ্বান করছেন, আপনারা কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এখনো মায়ের কান্না শেষ হয়নি। আর আপনারা তাদের নির্বাচনে আহ্বান করবেন। তাদের নিয়ে এসে ক্ষমতা দখল করবেন। এই ধোঁকাবাজি জনগণ বুঝে গেছে। ভারতের আচরণে আমরা বন্ধুত্ব পাইনি। আর আপনারা তাদের দোসরদের খুশি করবেন।”
মুফতি রেজাউল বলেন, “পিআর সিস্টেমের নির্বাচনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন হবে। এটা আপনারা (বিএনপি) কেন চাচ্ছেন না। আবার আপনারা এককভাবে ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের ওপর স্টিম রোলার চাপিয়ে দেবেন– সেটা হবে না। মায়ের কোল খালি করার রাজনীতি মানুষ আর দেখতে চায় না। দেশের টাকা পাচার করবেন, বিদেশে বেগম পাড়া তৈরি করবেন- এটা বাংলার মানুষ আর দেখতে চায় না। এই পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে আমরা আবার রক্ত দেব।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মুফতি রেজাউল বলেন, “আমাদের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। আপনারা গণঅভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতা, হাজারো মায়ের কোল খালি করার বিনিময়ে আপনারা ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু আপনাদের কাজকর্মগুলো অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ। এসব দেখে আমাদের দুঃখ হয়।”
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন মুফতি রেজাউল। তিনি বলেন, “পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। প্রত্যেকটা ভোটারের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশে জাতীয় সরকার হবে। এজন্য লাগলে আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব।”
সমাবেশে অংশ নেওয়া যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন আসবে। এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে যুবকদের। সেন্টারভিত্তিক দাওয়াতের মাধ্যমে প্রতি মাসে চারজনকে তৈরি করতে পারলে সেদিন বেশি দেরী নয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের নীতি আদর্শ বাস্তবায়িত হবে। এখন পরিবর্তনের সময়। গত ৫৩ বছরে এত সুন্দর ইসলামের পক্ষের পরিবেশ আর তৈরি হয়নি।”
একই সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও মুফতি রেজাউলের ভাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বিরোধিতা করেন। তিনিও তার বক্তব্যে বিএনপিকে ‘এক হাত’ নিয়েছেন।
মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, “৫০৫টা আসন রাখা হয়েছে। আসন কম হোক বেশি হোক সব জায়গায় নির্বাচনের ভিত্তিতে এমপি নির্বাচিত হতে হবে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত একশ আসন, এটা আমরা মানি না। সরাসরি নির্বাচন করে তাদের আসতে হবে। মহিলাদের জন্য এই আসন রাখা হলে তাদের দুর্বল ভাবা হয়। আমরা তো কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। তাহলে এখানে মহিলাদের জন্য কোটা রাখা হয় তাহলে বলতে হবে আন্দোলন সাকসেস হয়নি। নারীদের জন্য কোনো কোটা থাকবে না। আমরা চাই দ্বিকক্ষ বা এককক্ষ বিশিষ্ট যাই হোক, পিআর সিস্টেমে (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) নির্বাচন হবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ফয়জুল করিম বলেন, “সংস্কারের পরেই নির্বাচন হবে। আজকে যারা সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করেছেন, আমি বলব ১৬ বছর আপনারা কোথায় ছিলেন? রাখ-ঢাক না রেখেই বলব, বিএনপি, এতদিন আপনারা কোথায় ছিলেন? প্রতিবার ঈদের পর আন্দোলন হবে বলেছেন। হাজারো ঈদ চলে গেল, আপনারা কিছু করতে পারেনননি। ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ভিত্তিতে যে অর্জন করেছে সেটিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছেন। ৫ অগাস্টের পরে আবারও চাঁদাবাজি দখলবাজি। বাংলাদেশের মানুষ চাঁদাবাজি-দুর্নীতি দেখতে চায় না। যারা ৫ বার বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, জনগণ তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ ইসলামকে চায়। যারা খাঁটি ইসলাম, মদিনার ইসলামের চর্চা করে।”
আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি মন্তব্য করে ফয়জুল করিম বলেন, “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম, এখন চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। যারা দুর্নীতিবাজ, ডাকাত, যারা দেশকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।”
