সুরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ হয় না। আবার কিছু সুরা মুখস্ত করা আবশ্যক না হলেও সেগুলো শেখার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে, যেমন আবার সুরা কাহাফ। সুরা কাহাফের ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তারা এই বাণীতে বিশ্বাস না করলে তাদের পেছনে পেছনে ঘুরে ঘুরে তুমি হয়তো দুঃখে নিজেকে শেষ করে ফেলবে।
এ সুরার দশম আয়াতে একটি দোয়া আছে। এই দোয়া গুহাবাসী যুবকেরা করেছিল; “হে আমাদের প্রতিপালক তুমি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো ও আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো।” [তাফসীরে আহসানুল বায়ান]
রাসুল (সা.) আমাদের সুরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করতে বলেছেন।
আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (সহীহ- মুসলিম ৮০৯, আবূ দাঊদ- ৪৩২৩, তিরমিযী- ২৮৮৬, আহমাদ- ২১৭১২, মুসতাদারাক লিল হাকিম- ৩৩৯১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী- ৫৯৯৭, রিয়াযুস্ সলিহীন- ১০২৮, সহীহাহ্- ৫৮২, সহীহ আত্ তারগীব- ১৪৭২, সহীহ আল জামি- ৬২০১)
সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াতে ইসলামের মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে বলা হয়েছে। “আর তাদেরকে সতর্ক করার জন্য যারা বলে যে, আল্লাহ পুত্র গ্রহণ করেছেন; এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই, আর তাদের পিতৃ-পুরুষদেরও ছিল না। তাদের মুখ থেকে বের হয় বড়ই সাংঘাতিক কথা। তারা যা বলে তা মিথ্যে ছাড়া কিছুই নয়।” (সুরা কাহাফঃ ৪-৫) [তাইসিরুল]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ওপর ওহি অবতীর্ণ হওয়ার আলোচনা এসেছে, ‘প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর দাসের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন ও এর মধ্যে তিনি কোনো অসংগতি রাখেননি।’
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেননি কোন বক্রতা (অসংগতি)। (সুরা কাহাফঃ ১) [আল-বায়ান]
প্রতিদানের কথা এসেছে পরের আয়াতে। তাতে ভয় ও আশা দু’টি আবেগই দেখা যায়। “তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং মুমিনগণ যারা সৎকাজ করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য আছে উত্তম পুরস্কার (জান্নাত)। [তাফসীরে জাকারিয়া]; যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।” (সুরা কাহাফঃ ২-৩) [তাফসীরে আহসানুল বায়ান]
কোরআন মুখস্থ করলে ইমান বৃদ্ধি হয়। সুরা আল কাহাফে কয়েকটি গল্প রয়েছে যেগুলি দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগের জন্য বাস্তব পাঠ শেখায় এবং কোরআনের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যেমন, “যমীনের (পৃথিবীর বা দুনিয়া) উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, ‘আমালের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।” (সুরা কাহাফঃ ৭) [তাইসিরুল]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘আদমের সৃষ্টির পর থেকে বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত দাজ্জালের চেয়ে বড় আর কোনো ফিতনা নেই।’ {সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)- ৭১২৮} এটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে একটি ঢাল।
সুরা কাহাফে চারটি ঘটনা, চারটি বক্তব্য ও উপদেশ রয়েছে। সুরার ১ থেকে ৮ আয়াতে রয়েছে বক্তব্য। ৯ থেকে ২৬ আয়াতে আছে আসহাবে কাহাফের ঘটনা।