নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই তুলে দিতে না পেরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বই বিতরণ নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেছেন, কোন কোন জেলায় ষড়যন্ত্র করে সেগুলো আটকে রাখা হয়েছে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলোনায়তনে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন এবং বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের বইগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে যে এখনই সব দিতে পারা গেল না এজন্য তাদের অভিভাবকদের কাছে এবং তাদের কাছে আমি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এটুকু সান্ত্বনা, যখন বইগুলো পাবে ছাত্রছাত্রীরা আগের চেয়ে সুন্দর দেখাবে এবং বছরের মাঝখানে পাতাগুলো ছিড়ে যাবে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বই বিতরণ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নানাভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা বাধা দিয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কারা কারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন, কারা আমাদের জন্য বাধা সৃষ্টি করেছেন। তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কাউকে দোষারোপ করতে আমি চাই না। কত দিক থেকে আমাদের বিপরীতমুখী শক্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে এটা কল্পনাতীত। বিপরীতমুখী শক্তি কত জায়গা থেকে আসছে সেটা আমরা বুঝতেও পারি না।
কয়েকজন প্রেসমালিক ও কাগজ উৎপাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাবো কিছু কিছু প্রেসের মালিক, কিছু কিছু সবচেয়ে বৃহৎ কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি। তারা আমার ব্যক্তিগত অনুরোধে এখনকার যে বাজার মূল্য বেড়ে গেছে তার থেকে কমিয়ে আগের বাজারমূল্যে কাগজ সরবরাহ করেছেন। প্রেসের কিছু মালিকরাও বলেছেন আমাকে, ছেলেমেয়েরাও তো প্রাণ দিয়েছে তাদের জন্য আমরা কি করব না? তাদের জন্য আমরা সবাইকে দোষারোপ করতে চাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি কারা কারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং কারা কারা আমাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। আমরা সেটা পরবর্তীতে মূল্যায়ন করে দেখব এবং পরবর্তীতে যেই ক্ষমতা আসবে তার কাছে সে তথ্য দিয়ে যাব।
বইগুলো অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে পরিমার্জন করতে হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রতিদিন এখানে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে তা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, কোন সেন্টেন্সটা বাদ দিল কোন সেন্টেন্সটা যুক্ত হল, কে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে, কে মুক্তিযুদ্ধের নায়ক, সংবিধান লঙ্ঘন হলো কিনা-এগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হতে থাকবে। এতে কোন অসুবিধা নেই যদি পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, মাত্র আড়াই মাসে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছি। ছয় কোটি বই গেছে। চার কোটি ট্রাকে ওঠার অপেক্ষায়। আগামী ৫ জানুয়ারি প্রাথমিক ও দশম শ্রেণির সব বই, ১০ জানুয়ারি মাধ্যমিকের আটটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পাঠানোর চেষ্টা করব।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে, যা দেখা গেছে ফেলে আসা বছরেও।
তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উৎসবে ছেদ পড়েছে। এবার স্কুলগুলোতে সেই আয়োজন নেই। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে কোনো কোনো বিষয়ের পাঠ্যপুস্তুক তুলে দিতে পেরেছেন শিক্ষকরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগেই জানিয়েছিল, বছরের প্রথম দিন এবার নতুন কোনো পাঠ্যবই হাতে পাবে না প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ; যাদের এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করা হয়। সেইসঙ্গে বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। সেসব কাজ শেষ করে বই ছাপানো শুরু করতে অনেকটাই দেরি হয়।
এবার ৪০ কোটির মতো নতুন বই ছাপাচ্ছে সরকার। নতুন পাঠ্যবইয়ে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ ইতিহাসের বেশ কিছু বিষয়েও সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।