জমকালো আলোয় সাজানো শহর, রং-বেরঙের আতশবাজি, আর উচ্চস্বরে সংগীত যেন নতুন বছরের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। আমরা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পুরনো বছরকে বিদায় জানাই, নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এই আলোর ঝলকানির পেছনে রয়েছে এক অন্ধকার, যা চোখে না পড়লেও নীরবে আমাদের পাশেই চলতে থাকে— ঋণগ্রস্ত পরিবারের কান্না, যারা প্রতিদিন দারিদ্র্য, ঋণের চাপ, আর জীবিকার জন্য সংগ্রাম করে।
যখন আতশবাজির আলোর ঝলকানিতে রাত আকাশে রঙিন ছবি আঁকছে, তখনই হয়তো কোনো গৃহকর্তার চোখে জমে উঠেছে অশ্রু। সুদের ঋণ আর দারিদ্র্য তাদের সঙ্গী হয়ে ওঠে। পরিবারের ছোট ছোট চাহিদা, যেমন এক টুকরো হাসি কিংবা সন্তানের ছোট্ট কোনো আবদার— এগুলো তাদের কাছে এখন বিলাসিতা হয়ে গেছে। সেসব মানুষ দিনের পর দিন অসহায়ভাবে প্রার্থনা করে, আর আমরা উল্লাসে মেতে উঠি।
থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো আয়োজনে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, যার অধিকাংশই শুধুমাত্র আনন্দের নামে অপচয় করা হয়। আতশবাজি, গানের সুর, ভোজের আয়োজন—এই সব কিছুই শুধু সাময়িক আনন্দ দেয়, কিন্তু সে আনন্দে যদি অন্যদের দুঃখ চাপা পড়ে, তবে আমরা কি সত্যিকারের আনন্দ অনুভব করতে পারি? আমাদের এই আনন্দ যদি আমরা কিছুটা ভিন্নভাবে উদযাপন করতাম, তাহলে হয়তো অনেক মানুষের জীবন পাল্টে যেতে পারতো।
যদি এই অর্থ, যা আমরা অহেতুক খরচে নিঃশেষিত করি, সেই অর্থ অসহায় মানুষদের পুঁজি হিসেবে দেওয়া যেত— হাওলাত বা সুদমুক্ত ঋণের মাধ্যমে, তারা হয়তো ঋণগ্রস্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে পারতো।
যখন আমরা আনন্দে আকাশকে আলোকিত করে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করছি, তখন আমাদের চারপাশে এমন মানুষও আছেন যারা সুদের ঋণের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন। তাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা, যেমন কর্জে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণ ব্যবস্থা দেওয়া, তাদের নতুন বছরের প্রকৃত উপহার হতে পারে।
মসজিদ ডট লাইফ’র উদ্যোগটি এরকমই একটি মহান কাজ করছে। এটি একটি মানবিক প্রকল্প, যা সুদমুক্ত ঋণ বা কর্জে হাসানা প্রদান করে দরিদ্র মানুষদের, যারা সুদের ঋণে জর্জরিত। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, আমরা সমাজের একজন সদস্য হিসেবে কারো জীবন পাল্টাতে সাহায্য করতে পারি।
মসজিদ ডট লাইফ (Masjid.Life) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হলো সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা, যেন তারা শোষণের কবলে না পড়ে এবং নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে। এতে শুধু ঋণ প্রদানই নয় বরং পরামর্শ, সহযোগিতা ও পথপ্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ দেওয়া হয়। এটি একটি সুষ্ঠু এবং মানবিক ব্যবস্থা, যা সমাজে ন্যায়ের বীজ বুনে দেয় এবং মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে।
এই মুহূর্তে যদি আমরা আমাদের উৎসবের আনন্দের অংশ কিছুটা অন্যদের জন্য বরাদ্দ করি, যদি আমরা সেই অর্থ যাদের দরকার তাদের পুঁজি হিসেবেই দিই, তাহলে হয়তো আমাদের এই আধ্যাত্মিক এবং মানবিক উদযাপন অনেক বেশি অর্থবহ হবে।
আলোর উৎসবের মধ্যে যদি আমরা অন্ধকারে ডুবন্ত জীবনগুলোর দিকে একটু তাকাই, আমাদের সহযোগিতা তাদের নতুন বছরের শুরু হতে পারে।
কর্জে হাসানা বা মসজিদ ডট লাইফ এর মতো উদ্যোগগুলো এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে, যেখানে উৎসব মানে কেবল আনন্দ নয়, বরং সেটা সকলের জন্য একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সময়ও হতে পারে।
এমনটা হলে সত্যিকার অর্থে আমরা আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারবো, যেখানে আলো শুধু শহরের আলোকিত রাস্তায় নয়, বরং আমাদের মনেও ফুটবে।