উত্তর গাজার সর্বশেষ হাসপাতালের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে, হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
উত্তর গাজায় প্রায় সব হাসপাতালের কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ কামাল আদওয়ান হাসপাতালেও হামলা চালানোর কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে এবং ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার হাসপাতালটিতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। অভিযানের আগে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় হাসপাতালটির কিছু অংশে আগুন ধরে যায়।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে যে, অক্টোবরে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় বিস্তৃত অভিযান শুরু করার পর থেকে হাসপাতালটি হামাসের মূল ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে হামাসের কার্যক্রম চলছিল। এমন অভিযোগ এনেই সেখানে বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার সময় ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ২৫ জন গুরুতর রোগী হাসপাতালে অবস্থান করছিল।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাটি জানিয়েছে, মাঝারি থেকে গুরুতর অবস্থার রোগীদের বাধ্য হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং অকার্যকর ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে সরিয়ে নিতে হয়েছে। এসব রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের প্রধান ঈদ সাব্বাহ বিবিসিকে বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে সেনাবাহিনী তাদের হাসপাতালে রোগী ও কর্মীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনকে ১৫ মিনিট সময় দেয়।
পরে ইসরায়েলি সেনারাই হাসপাতালে প্রবেশ করে বাকি রোগীদের সরিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার বিকেলে জানিয়েছে, তারা হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। তারা ‘হাসপাতালকে হামাসের শক্ত ঘাঁটি’ বলে অভিহিত করেছে।
বিবিসি লিখেছে, অভিযান শুরুর আগে ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতাল থেকে বেসামরিক, রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। তবে রোগীদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তা জানায়নি সেনাবাহিনী।
সপ্তাহের শুরুতে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, তারা কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আহতদের নিকটবর্তী ইন্দোনেশিয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছেন।
চিকিৎসক সাব্বাহ বলেন, “এটি বিপজ্জনক কারণ অনেক রোগী কোমায় রয়েছেন। তাদের ভেন্টিলেশন মেশিনের প্রয়োজন হয়। মুমূর্ষু রোগীদের স্থানান্তরিত করা খুবই বিপদজনক।
“সেনাবাহিনী যদি এসব রোগীকে সরিয়ে নিতে চায়, তাহলে তাদের বিশেষায়িত গাড়ির প্রয়োজন হবে”, বলেন তিনি।
তার কিছুক্ষণ পর গাজার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসুফ আবু-আল রিশ বিবিসিকে বলেন, “আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীদের ইন্দোনেশিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ঠিক হাসপাতাল বলা যায় না। এটি একটি আশ্রয়স্থল। রোগীদের জন্য প্রস্তুত নয়।”
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) আন্তর্জাতিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি শুক্রবার সন্ধ্যায় এক্স পোস্টে বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, অভিযানের সময় হাসপাতালের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।”
আইডিএফ সৈন্যরা যখন হাসপাতালের ভিতরে ছিল না তখন আগুন লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আইডিএফের ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আগুনের কোনও সংযোগ পাওয়া যায়নি।”
এর কয়েক ঘণ্টা আগে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক জানান, হাসপাতালের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচ মেডিকেল স্টাফসহ প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
হুসাম আবু সাফিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের বিপরীতে একটি ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালায়। এতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ও ল্যাব টেকনিশিয়ান ও তাদের পরিবার নিহত হয়।
এদিকে এই হামলা নিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার সকালে বলেছে, তারা কামাল আদওয়ান হাসপাতাল এলাকায় বিমান হামলার বিষয়ে অবগত ছিল না। চিকিৎসাকর্মী নিহত হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে বিবিসি কে।
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মরিয়া হয়ে আবেদন জারি করেছিল। কারণ তারা সম্প্রতি ইসরেয়েলি গোলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
