ছাত্র জনতার তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে গেছেন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তখন থেকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে রয়েছেন। সেখানকার এক বাংলোতে থেকে প্রায়ই তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে ভারতে কিসের ভিত্তিতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে; তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দেশটিতেই।
দু’দিন আগে এই প্রশ্ন তুলেছিলেন ভারতের সংসদের কয়েকজন সংসদ সদস্য। ঢাকা সফর থেকে ফেরার দু’দিন পর গত বুধবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় নিয়ে তিনি ব্রিফ করেন। দিল্লিতে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ব্রিফে দেশটির ২১ থেকে ২২ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বুধবারের ব্রিফে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম আইএনএস জানায়, ব্রিফ্রিংয়ের সময় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির কাছে ভারতের কয়েকজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনা কোন মর্যাদায় দেশটিতে অবস্থান করছেন, সেই সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
এদিকে, শনিবার একই ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান ও হায়দরাবাদের প্রভাবশালী রাজনীতিক এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার এই সদস্য বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু ইস্যুতেও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম আজতক নিউজের বিশেষ অনুষ্ঠানে ‘অ্যাজেন্ডা আজতকে’ অংশ নিয়ে হায়দরাবাদের এই এমপি বলেছেন, শুক্রবার লোকসভার অধিবেশনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন- সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের কথা বলা উচিত। কেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কারণে ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে?’
এরপরই তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে আশ্রয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করে বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে কেন আশ্রয় নিয়েছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কি শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যকে সমর্থন করছে? এমন প্রশ্নও করেন তিনি। ওয়াইসি বলেন, একটি দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সম্পর্ক হওয়া উচিত; কোনও বিশেষ পরিবারের সঙ্গে নয়।