বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রহ্মচারীসহ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
১৭ জনের ব্যাংক হিসাবে সব ধরনের লেনদেন ৩০ দিন বন্ধ রাখতে বিএফআইইউ বৃহস্পতিবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
সূত্র জানায়, হিসাব জব্দ করা ব্যক্তিদের নামে ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট স্থগিত থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে। ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিতের এ নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন–২০১২–এর ২৩(১)(গ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ইসকন ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবের (আমদানি ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ব্যতীত) লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হলো। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত সব হিসাবের হিসাব–সংক্রান্ত তথ্য, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ফরম, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী প্রভৃতি আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলেছে বিএফআইইউ।
চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রহ্মচারীসহ অন্য যাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে তারা হলেন- কার্ত্তিক চন্দ্র দে, অনিক পাল, সরোজ রায়, সুশান্ত দাস, বিশ্ব কুমার সিংহ, চণ্ডীদাস বালা, জয়দেব কর্মকার, লিপি রানী কর্মকার, সুধামা গৌর দাস, লক্ষণ কান্তি দাশ, প্রিয়তোষ দাশ, রূপন দাস, রূপন কুমার ধর, আশীষ পুরোহিত, জগদীশ চন্দ্র অধিকারী ও সজল দাস।
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গত ২৫ নভেম্বর (সোমবার) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর রাত থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
পরদিন মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। এদিন চট্টগ্রামের আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।
চিন্ময়কে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময়ও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সমর্থকরা প্রায সাড়ে তিন ঘণ্টা আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময়ের প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের সরায়।
ওইদিন বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাশসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের ওই মামলা হয়।