Dianta-News-PNG
ঢাকা শনিবার- ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫, ১১ই মাঘ ১৪৩১, ২৪শে রজব ১৪৪৬ রাত ৩:১৯

ইতিহাসের ইতিহাস; আমরা ভুলে যেতে পারি কি?

দিগন্ত নিউজঃ
নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ৪:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জাতি হচ্ছে একটি সম্প্রদায় যা একটি সাধারণ ভাষা, অঞ্চল, ইতিহাস, জাতিগততা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। স্পষ্টতই, জাতি উপজাতি হতে অধিক রাজনৈতিক।জাতির অন্য একটি সংজ্ঞা হচ্ছে, এটি একটি সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায়ের জনগণ নিজেদের স্বায়ত্তশাসন, ঐক্য ও অন্যান্য অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। আমেরিকান রাজনৈতিক বিজ্ঞানী বেবনেডিক্ট এন্ডারসন জাতিকে একটি কাল্পনিক সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আর অস্ট্রেলিয়ান পন্ডিত পল জেমস জাতিকে কোনো একটি সম্প্রদায়ের খন্ড হিসেবে দেখেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, একটি জাতি হলো একটি ভূ-খন্ডের স্বাধীন ও সার্বভৌম অঞ্চল।

তেমনি ভাবে আমাদের অলোচনা; শের-এ-বাংলা এ. কে ফজলুল হক ছিলেন প্রথম বাঙালি মুসলমান যিনি ১৯৩৭ সালে প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। ১৯৪০ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে জ্বালাময়ী বক্তৃতায় প্রথম পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন। তাঁর বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে পাঞ্জাববাসীরা তাঁকে শের-ই-বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলার বাঘউপাধি দেয়। সে থেকে তিনি শের-ই-বাংলা নামেই পরিচিত। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। ১৯৪০ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে জ্বালাময়ী বক্তৃতায় প্রথম পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন। এই লাহোর প্রস্তাবই “পাকিস্তান প্রস্তাব’’ হিসেবে পরবর্তীকালে আখ্যায়িত হয়। তাঁর বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে পাঞ্জাববাসীরা তাঁকে উপাধি দেয় শের-ই-বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলার বাঘ। সে থেকে তিনি শের-ই-বাংলা নামেই পরিচিত।১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর এ. কে. ফজলুক হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে গঠিত হল যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিপরিষদ এই ২১ দফা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর হন। উল্লেখ্যযোগ্য কর্মসূচিগুলো হলো; বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা, ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিতে ‘শহীদ মিনার’ নির্মাণ।বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ধমান হাউসকে বাংলা ভাষা গবেষণা কেন্দ্র বা বাংলা একাডেমি ঘোষণা করা এবং জমিদারি ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া। তাছাড়া তিনি “ঋণ সালিশী বোর্ড” গঠন করেন। এর ফলে দরিদ্র চাষীরা সুদখোর মহাজনের কবল থেকে রক্ষা পায়।

মওলানা ভাসানী ১৯৩১-এ সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২-এ সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় ও ১৯৩৩-এ গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৩৭-এ মওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। সেই সময়ে আসামে ‘লাইন প্রথা’ চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। এসময় তিনি “আসাম চাষী মজুর সমিতি” গঠন করেন এবং ধুবরী, গোয়ালপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে “বাঙ্গাল খেদাও” আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়। এসময় বাঙালিদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে আসামে গ্রেফতার হন। ১৯৪৮-এ মুক্তি পান। মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের জন্মসূত্রের সাথে ঢাকা ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের উদ্যোগের সম্পর্ক অনস্বীকার্য। ২৩ জুনের সম্মেলনের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শওকত আলী। তার উদ্যোগে ১৫০ নং মোগলটুলিস্থ শওকত আলীর বাসভবন এবং কর্মী শিবির অফিসকে ঘিরে বেশ কয়েক মাসের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতার পর ২৩ জুনের কর্মী সম্মেলনে দলের ঘোষণা দেয়া হয়। শওকত আলীর অনুরোধে কলকাতা থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি মামলা পরিচালনার কাজে ঢাকায় এলে তিনি শওকত আলীকে মুসলিম লীগ ছেড়ে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। শওকত আলী এ পরামর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের নেতৃবৃন্দকে নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন। এসময় কর্মী শিবিরের প্রধান নেতা ছিলেন শামসুল হক। কামরুদ্দীন আহমদ, মো. তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান, আবদুল আউয়াল, মুহম্মদ আলমাস, শামসুজ্জোহা প্রমুখ প্রথম দিকে এবং পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান কর্মী শিবির কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন। মুসলিম লীগের আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের অন্যায় কাজগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যেই এখানে কর্মী শিবির গড়ে তুলেছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৪৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকা এলে তার সঙ্গে শওকত আলীর সঙ্গে কর্মী শিবির সম্পর্কীত আলোচনা হয়। সেজন্যে ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মওলানা ভাসানী সেই বৈঠকে যোগদান করেন। শওকত আলীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, ইয়ার মুহম্মদ খানকে সম্পাদক এবং খন্দকার মুশতাক আহমদকে দপ্তর সম্পাদক করে অন্যদেরসহ একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন টাঙ্গাইলের মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে (খায়ের মিয়া) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। এসময় শেখ মুজিব কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের অর্থাৎ বাংলার প্রধানমন্ত্রী। দিল্লীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অবিভক্ত এবং স্বাধীন বাংলার ধারনার একটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। দূরবিসন্ধির মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দির সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হতে দেয়া হয়নি তখন।আমেরিকার কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ আয়েশা জালালের ‘দ্য সোল স্পোকসম্যান: জিন্নাহ, দ্য মুসলিম লীগ এন্ড দ্য ডিমান্ড ফর পাকিস্তান’ বইতে অনেক ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।সোহ্রাওয়ার্দী সাহেব মুসলমানদের মধ্যে তার ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের সাথে তিনি জড়িত হননি। ১৯৩৬ সালের শুরুর দিকে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি নামক দল গঠন করেন। ১৯৩৬ সালের শেষের দিকে এই দলটি বাংলা প্রাদেশিক প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাথে একীভূত হয়। এই সুবাদে তিনি বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ তথা বিপিএমএল এর সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের শেষ দিক পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৯৪৩ সালে শ্যামা-হক মন্ত্রীসভার পদত্যাগের পরে গঠিত খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায় তিনি একজন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন।

১৯৪৭ এর আগস্টে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে মুসলিম লীগের রক্ষণশীল নেতারা খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে উঠেন। এর আগে ১৯৪৭ সালের ৫ই আগস্ট খাজা নাজিমুদ্দিন জিন্নাহর পরোক্ষ সমর্থনে মুসলিম লীগের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন। এরপর থেকে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবার পর বেশ কয়েকবার সোহরাওয়ার্দীকে “ভারতীয় এজেন্ট এবং পাকিস্তানের শত্রু” হিসেবে অভিহিত করেন। সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য পদ থেকে অপসারিত করা হয়। তার অনুসারীরা অনেকে ১৯৪৮ এর শুরুর দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ এবং ১৯৪৯ এর জুনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ” প্রতিষ্ঠিত হয়। রোজ গার্ডেনে ২৩ জুনের বিকেল ৩টায় সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আবদুল জব্বার খদ্দর, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আতাউর রহমান খান, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আলী আমজাদ খান, শামসুদ্দীন আহমদ (কুষ্টিয়া), ইয়ার মুহম্মদ খান, মওলানা শামসুল হক, মওলানা এয়াকুব শরীফ, আবদুর রশিদ প্রমুখ।

আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। এই যুক্তফ্রন্টের নেতা ছিলেন – ১) মওলানা ভাসানী, ২) একে ফজলুল হক ও ৩) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। ওই ইশতেহারের মধ্যে প্রধান দাবি ছিল-লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা, ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে শহীদ মিনার নির্মাণ করা ইত্যাদি।১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অপরাধ দেখিয়ে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীকে জানুয়ারি ৩০, ১৯৬২ তে তাকে গ্রেফতার করে করাচি সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ রাখা হয়। আগস্ট ১৯, ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি পান। অক্টোবর, ১৯৬২ তে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট (এন. ডি. এফ.) গঠন করেন।শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় থেকে ভারতবর্ষ বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৩৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রথম সাক্ষাৎ হয় গোপালগঞ্জে।সোহরাওয়ার্দীকে তিনি “লিডার” বলতেন এবং পথপ্রদর্শক নেতা বলেই মানতেন। রাজনীতিতে প্রবেশের সূচনা থেকেই তিনি সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ছিলেন এবং সেই সম্পর্কে কোনো বিচ্ছেদ ঘটেনি। সোহরাওয়ার্দীকেই তিনি তার প্রধান ও প্রথম নেতা বলেই মানতেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ হিন্দু মহাসভার সভাপতি সুরেন ব্যানার্জির বাড়িতে সহপাঠী বন্ধু আবদুল মালেককে মারপিট করা হলে শেখ মুজিবুর রহমান সেই বাড়িতে গিয়ে ধাওয়া করেন। সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে হিন্দু মহাসভার নেতাদের কর্তৃক মামলায় শেখ মুজিবকে প্রথমবারের মতো আটক করা হয়। ৭ দিন হাজতবাস করার পর তিনি ছাা পান। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং মহকুমা মুসলিম লীগের ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। এ সময়ে তিনি এক বছর মেয়াদের জন্য নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ প্রমুখ যোগদান করেন। শেখ মুজিব এই সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক ছিলেন।শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালীন তিনি বাংলার অগ্রণী মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। এম. ভাস্করণ তাকে “সোহ্রাওয়ার্দীর ছত্রতলে রাজনীতির উদীয়মান বরপুত্র” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ঐ সময়েই বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলিম লীগের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব এ সময় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের সময় কলকাতায় ভয়ানক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন। ভারত ও পাকিস্তান কর্তৃত্বের বাইরে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা গঠনের যে “যুক্তবঙ্গ আন্দোলন” সংগঠিত হয়, শেখ মুজিব তাতেও যুক্ত হন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি উক্ত অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে জানুয়ারি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। এ সময়েই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৫০ সালে জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমনকে উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে এবারও শেখ মুজিবকে আটক করা হয়। এ আটক ১৯৫২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করলে শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন। তাকে দলের পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুলাই শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট তৈরী হবার পর পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা এবং সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করেন সময় সেসময় শেখ মুজিবর রহমানকে আটক করা হয়। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ২২ সেপ্টেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে তাকে আবার আটক করা হয়। ২রা জুন তারিখে চার বছরব্যাপী বহাল থাকা সামরিক আইন তুলে নেওয়ার পর ১৮ই জুন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংহত করার সিদ্ধান্তনেওয়া হয়। ঐ বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেখ মুজিবকে আওয়ামী লীগের মহাসচিবও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বর তারিখে ভারতের দালাল অভিযুক্ত করে তাকে আটক করা হয়। শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং আপত্তিকর প্রস্তাব পেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এক বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উচ্চ আদালতের এক রায়ে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তিনি মুক্তি পেয়ে যান। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যা ছিল কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা।

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা মার্চে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রচার কার্য পরিচালনা করেন ও প্রায় পুরো দেশই ভ্রমণ করে জনসমর্থন অর্জন করেন। সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়ে দুই বছর জেলে থাকার পর ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবসহ ৩৫ জন বাঙালি সামরিক ও সিএসপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে সুপরিচিত। ৬ই জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ২৮ জনকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জুন ঢাকা সেনানিবাসের এক বিশেষ ট্রাইবুনালে এ মামলার শুনানি শুরু হয়।বিচারকার্য চলাকালীন ২৬ জন কৌশলী ছিলেন। শেখ মুজিবের প্রধান কৌশলী ছিলেন আব্দুস সালাম খান। একটি অধিবেশনের জন্য ব্রিটেন থেকে আসেন আইনজীবী টমাস উইলিয়ামস। তাকে সাহায্য করেন তরুণ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আহমেদ। মামলাটিতে মোট ১০০টি অনুচ্ছেদ ছিল। ১১ জন রাজসাক্ষী ও ২২৭ জন সাক্ষীর তালিকা আদালতে পেশ করা হয়। মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঞ্জুর কাদের, এম আর খান ও মুকসুদুল হাকিম। এর অব্যবহিত পরেই সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের এগারো দফা দাবি পেশ করে, তন্মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলোই অন্তর্ভুক্ত ছিল। উক্ত পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আন্দোলনটি এক পর্যায়ে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। পরবর্তীকালে এই গণআন্দোলনই “ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান” নামে পরিচিতি পায়। লাখো জনতার অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সম্মেলনে তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি প্রদান করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ২টি আসন ছাড়া বাকি সবগুলোতে জয়ী হওয়ায় জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করে আওয়ামী লীগ। ১৭ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও সামরিক শাসকগোষ্ঠী দলটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ উক্ত অধিবেশনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ছাত্রলীগ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, আ. স. ম. আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উদ্বোধন করেন আ স ম আবদুর রব। এ ধরনের কর্মসূচির ফলে বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ দেন। এ ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুলসংখ্যক লোক একত্রিত হয়। সাধারণ জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।

তিনি ঘোষণা দেন-
“… রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’’

১৫ই মার্চ ১৯৭১ অসহযোগ আন্দোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট ৩৫টি নির্দেশনা জারি করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন এবং ১৬ই মার্চ শেখ মুজিবের সঙ্গে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। সেনাবাহিনীর জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় প্রেরণের পাশাপাশি সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো চলমান থাকে। ১৯শে মার্চ ইয়াহিয়া-মুজিব তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২১শে মার্চ আলোচনায় যোগ দিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো ১২ জন উপদেষ্টাকে সফরসঙ্গীসহ ঢাকায় আসেন। ২২শে মার্চ ভুট্টো-মুজিবের ৭০ মিনিটের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করা সত্ত্বেও ভুট্টো-মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সফল হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানে ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। ২৫শে মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে বাঙালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত অপারেশন সার্চলাইট প্রদান করে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করেন। ঐদিন তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধে ভারতের সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিয়ে গড়া যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে শেখ মুজিব স্বাক্ষর করেন। ১৫ই ডিসেম্বর শেখ মুজিব সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেন। ১৬ই ডিসেম্বর থেকে নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়। ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয় লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে এগারোটি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে জাসদ এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে।ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এবং শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলও ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে।জাসদের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ঘোষণা দেন যে তিনি সংসদে মেহেনতি মানুষের কথা বলবেন।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণায় তিনি “মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে সহায়তাকারী দালালেরা’’ তাদের ভুল বুঝতে পেরে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং দালাল অধ্যাদেশে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে চালের দাম আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়, যা ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত। উক্ত দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যাভাব ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের অব্যবস্থাপনাকে সেসময় এর জন্যে দোষারোপ করা হয়।মুজিবের শাসনামলে দেশবাসী শিল্পের অবনতি, বাংলাদেশী শিল্পের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ এবং জাল টাকা কেলেঙ্কারি প্রত্যক্ষ করে। গণঅসন্তোষ সত্ত্বেও মুজিব সরকার ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারী “জাতীয় রক্ষীবাহিনী অধ্যাদেশ-১৯৭২” এ একটি সংশোধনী জারি করে রক্ষীবাহিনীর সকল কার্যকলাপ আইনসঙ্গত বলে ঘোষণা করেন। রক্ষীবাহিনীকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অভিযোগে সেনাবাহিনীর একাংশের মধ্যেও সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষ খাদ্য সংকট আরও বাড়িয়ে দেয় এবং অর্থনীতির প্রধান উৎস কৃষিকে ধ্বংস করে ফেলে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি শেখ মুজিব নতুন যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হন, একে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিপ্লব বলে আখ্যা দেন। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এ সরকারে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। পরিবর্তিত সংবিধানের আওতায় ৬ই জুন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল দল, সরকারি-বেসরকারি এবং অন্যান্য সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্য নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবিশেষকে অন্তর্ভুক্ত করে “বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ” (বাকশাল) নামে একটি জাতীয় দল গঠন করা হয়। এ সময় শেখ মুজিব নিজেকে আমৃত্যু রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। বাকশাল বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। শেখ মুজিব জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সহায়তায় বাকশাল-বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করেন এবং সারাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। তবে রক্ষীবাহিনী এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও রাজনৈতিক হত্যার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও মুজিব নীরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীরা মুজিবের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন এবং তার কর্মকাণ্ডকে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার বিরোধী বলে গণ্য করেন।

গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার বিরোধী শাষন ব্যবস্থার কারণে অতিষ্ট হয়ে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট প্রত্যূষে একদল সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমন্ডিস্থ বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্য–বেগম ফজিলাতুন্নেসা, শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকী, শেখ জামাল ও তার স্ত্রী পারভীন জামাল রোজী, শেখ রাসেল, শেখ মুজিবের ভাই শেখ আবু নাসের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই দিন শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার স্ত্রী বেগম আরজু মনি, শেখ মুজিবের ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতনি সুকান্তবাবু, বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত ও এক আত্মীয় বেন্টু খানকে হত্যা করা হয়। এছাড়া শেখ মুজিবের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জামিল উদ্দিন আহমেদ, এসবি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক নিহত হন। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান আর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দেশে চলমান অচলাবস্থা তৈরি হয় ও সেনাবাহিনীতে ব্যাপক অরাজকতা দেখা দেয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বর তৃতীয় সিপাহী-জনতার বিপ্লবের ফলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা আসীন হয়।

জিয়াউর রহমানকে বলা বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রপতি। ১৯৭১ সালে রণনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে। ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর হামলা চালায়। সে রাতে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হবার পর তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন তার পরিবারের কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা করেননি, যে তারা ঢাকা সেনানীবাসে বন্দি হয়ে যাবেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে।

মুজিব-হত্যার পর হত্যার চক্রান্তকারী মুজিব মন্ত্রীসভার বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ সংবিধান বহির্ভূতভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ১০ দিন পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট জিয়াউর রহমান-কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করা হয়। নিযুক্ত হওয়ার পর চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে ব্যর্থ হন। ফলে ঐ বছরের ৩রা নভেম্বর বীর বিক্রম কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন ঢাকা ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের সহায়তায় বীর উত্তম মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। এর ফলে ৬ই নভেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমেদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হন। জিয়াউর রহমানকে চিফ-অফ-আর্মি স্টাফের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। সেই সময়ে তাঁর বাড়িটির সাথে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন করা হয়। শুধুমাত্র একটি মাধ্যম তাঁর শোবার ঘরের টেলিফোনটি সচল ছিল, ঐ সময় হয়তোবা কেউ বুঝতেও পারেনি।

সেনাবাহিনীর একজন জনপ্রিয় অফিসার হিসেবে জিয়া, কর্নেল তাহেরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে জাসদ-সৃষ্ট “গণবাহিনী”র প্রধান ছিলেন। গণবাহিনীর লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ পদ্ধতির পরিবর্তে একটি চীনা ধরনের “পিপলস আর্মি” তথা “শ্রেণিবিহীন সেনাবাহিনী” গঠন করা। জিয়া টেলিফোনে তাহেরকে নিজের মুক্তির জন্য সহায়তা চান। তাহের সৈনিকদের একতাবদ্ধ করার লক্ষ্যে ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এই ১২টি দফা মূলত সিপাহীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রণীত হয়। জিয়াকে মুক্ত করার জন্য কর্নেল তাহের ও জাসদের উদ্যোগে পরিকল্পনা করা হয়: জিয়াকে মুক্ত করা, খালেদ মোশাররফের পতন ঘটানো এবং জিয়ার কাছ থেকে সিপাহীদের স্বার্থে ১২ দফার বাস্তবায়ন। তারা উল্লেখ করেন যে, খালেদ মোশারফ হচ্ছেন ভারতের আগ্যাবহ হয়ে ক্ষমতায় আহরণ করছেন।এ পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ সামরিক নিম্নপদস্থ সিপাহীরা জাসদের গণবাহিনীর সহায়তায় ৭ই নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায়। এ অভ্যুত্থানের স্লোগান ছিল: “সেপাই সেপাই ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই!… সেপাই সেপাই ভাই ভাই, সুবেদাররের ওপরে অফিসার নাই”।জিয়াউর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্ত করে অভ্যুত্থানকারীরা ২য় ফিল্ড আর্টিলারির সদরদপ্তরে নিয়ে আসে। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর অভ্যুত্থানের পর তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চিফ অফ আর্মি স্টাফ পদে নিযুক্ত করা হয় এবং বেতারে ভাষণে জিয়া নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন এবং প্রতিবাদের মুখে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন।

বিচারপতি সাদাত মোহাম্মদ সায়েম একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে থাকেন। সায়েম নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাঁর অত্যন্তআস্থাভাজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে দায়িত্ব দেন। এদিকে সায়েমের পরম আস্থাভাজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সাত্তারও তার নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব আগ্রাহ্য করে জিয়াকে ক্ষমতা দখলের ইন্ধন জোগাতে থাকেন। দেশের এই সংকটময় মূহুর্তে জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে নেন। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রধান করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করেন। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপি-র সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রথম মহাসচিব ছিলেন। উক্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে আব্দুল মালেক উকিল এর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৮টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১টি ও মুসলিম ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি আসনে জয়লাভ করে।

রণনায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদদের কাছে সমাদৃত ও স্বীকৃত। শেখ মুজিবের আমলের শেষের দিকে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দমন এবং বাকশাল (মুজিবের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একদলীয় শাসন) রহিতকরণের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। সেই সময়েই আমার সোনার বাংলা”র পরিবর্তে “প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ” জীবন বাংলাদেশ, মরনেও বাংলাদেশ এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব করা হয়। এসময় রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি প্রথম বাংলাদেশ গানটি গাওয়া শুরু হয়। কিন্তু ১৯৮১ সালে জিয়ার মৃত্যুর পর সেই উদ্যোগ থমকে যায়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অনিমিষা অন্ধকার থেকে বাংলাদেশকে টেনে আলোর পথে এনেছেন। যার ধরুন আজ বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে বিশ্বের দরবারে পরিচয় বহন করতে পারছে। যুব সমাজকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য তিনিই সর্বপ্রথম উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন। যা আজ তৈরী যুব মন্ত্রণালয়। গ্রামীণ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য তৈরী করেছিলেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা টিম। যারা আজ নিরাপত্তা বিধান করছে শহরে গ্রামে আনাছে কানাছে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অলম্বন করে সহজেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় এসেই ইন্দে-সোভিয়েত বলয় থেকে বের হয়ে আমেরিকা ও চীনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। শহীদ জিয়া দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভু-রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টির জন্য সার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন। তাই তাঁকে সার্কের স্বপ্নগ্রষ্টা বলা হয়ে থাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। একই বছরের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে খুন হন সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যার আরেকটি কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে ১৯৮১ সালের ৯ মে ভারত দক্ষিণ তালপট্টিতে আইএনএস সন্ধ্যায়ক নামে নৌ-বাহিনীর এক জাহাজ পাঠিয়ে ভারতের পতাকা উত্তোলন করে। বাংলাদেশ এর তীব্র প্রতিবাদ করে। তার কিছু পরে ভারত সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে। তবে পরবর্তী সময়ে দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জাতিসংঘের ল’ অব দ্যা সি অনুযায়ী তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা মীমাংসিত হবে। এরপর ২৩ মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি-র জাতীয় কমিটির বর্ধিত সভায় বলেছিলেন, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এরপর ৩০ মে তিনি চট্টগ্রামে মর্মান্তিকভাবে শাহদাত বরণ করেন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দেশ পরিচালনাকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্যাবহ হয়ে দেশ পরিচালনা করতেন। মুলত ৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। এরশাদ দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন বলে জনসম্মুখে বললেও টাকার বিনিময়ে রাতের অন্ধকারে নির্বাচনে অংশগ্রহন করার ঘোষণা দেয়। জামায়াতও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। সাধারণ নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন। ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচন সকল দল বয়কট করে। এ সময়ের মধ্যে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক নাটকীতার জন্ম হয়। এরশাদের স্বৈরাচারের বিরূদ্ধে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সকল বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে। এর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। দুর্নীতি মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি আবারও পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে তিনি মূল ধারার চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪ সালের বির্তকিত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে তার সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন। তিনি ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

বেগম খালেদা জিয়া জন্মগত নাম খালেদা খানম পুতুল ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে জিয়াউর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়। জিয়া তখন ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গৃহবন্দী করে রাখে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি মুক্তি পান। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত বেগম জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। মূলত দুই পুত্রকে লালন পালন ও ঘরের কাজ করেই সময় কাটাতেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও রাজনীতিতে বেগম জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়। ১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া “এরশাদ হটাও” শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন।

অবশেষে দীর্ঘ আট বছর অবিরাম, নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সরকারের এই মেয়াদকালে বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচিসহ হরতাল ধর্মঘট পালন করতে থাকে। একসময়ে প্রধান বিরোধীদল সংসদ বর্জন করে। ২৮ সে অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে লগী-বৈঠার কর্মসূচি গ্রহণ করে। আর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে এবং এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০০৭ সালের জানুয়ারি এগারো তারিখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায় সরকার গঠনের করে যা এক এগারো সরকার নামে পরিচিতি পায়। এই সময়ের মধ্যে শীর্ষ দুই দলের শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বাদ দেবার জন্য তখনকার সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের উপর ছিল কড়া নজরদারী। অন্যদিকে একটি সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে সেনা সমর্থিত সরকারের উপর চাপও বাড়ছিল। অবশেষে প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এই সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে। ঐ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোটকে পরিকল্পিতভাবে পরাজিত করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন। ১৩ নভেম্বর ২০১০ বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে বলপ্রয়োগে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এর সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাম হাসিনা শেখ। পরবর্তীতে ড. ওয়াজেদ আলীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্দ হওয়ার পর ওয়াজেদ যুক্ত হয়। বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দিক দর্শণ তাকে বেশি আকর্ষন করে তোলে। সেই সুবাদে তিনিও জনগনের সেবায় এসে পথচলা শুরু করেন। ছাত্র জীবনে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন এরপর তিনি ইডেন কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং রোকেয়া হলের মহিলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে হাসিনার স্বামী, সন্তান এবং তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়।হত্যার সময় হাসিনা, ওয়াজেদ ও রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। সেখানে তারা ড. কামাল হোসেনের সহায়তায় বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন; পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যরা ছয় বছর ধরে ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন। এরইমধ্যেআসে ‘৭৫ পরবর্তী আওয়ামীলীগের তৃতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে রাজ্জাক এবং তোফায়েল উভয়ই আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দখলে অর্থাৎ সভাপতি ও সাধারণসম্পাদক পদ দখলের তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্তহয়। অবস্থা বেগতিক দেখে দলের ভিতরের বিরুদ্ধবাদীদের মোকাবেলা করার জন্য আব্দুররাজ্জাক আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনাকে এই ভেবে নিয়ে আসেন যে, শেখ মুজিব পরিবারের এই অরাজনৈতিক মহিলা সবসময়ই তার (আব্দুররাজ্জাকের) মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। ১৯৮১ সালে স্বামীর সঙ্গে নয়াদিল্লি অবস্থানকালে ১৬ ফেব্রুয়ারি, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর, ১৭ মে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তন করেন এবং হাজার-হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে স্বাগত লাভ করেন। কিন্তু তিনি এসেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিষদগার শুরু করেন। জনশ্রুতি আছে যে প্রতিবেশী দেশের পরামর্শে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ও সরকার উৎখাত করে সামরিক বাহিনীর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার ব্যাপারে জেনারেল এরশাদ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চার-পাঁচ দফা গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং নভেম্বরে তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৫ সালের মার্চে, তাকে আরও তিন মাসের জন্য গৃহবন্দি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে। তিনি ১৯৮৬-১৯৮৭ সালে সংসদীয় বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালের নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে, ঢাকায় একটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটে এবং আওয়ামী লীগ কর্মী এবং হাসিনার সমর্থনকারী নূর হোসেনসহ বেশকয়েকজন নিহত হন। খালেদা জিয়ার অধীনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সাথে হাসিনার দল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ চালিয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে স্বৈরাচার এরশাদের এবং তার উপরাষ্ট্রপতি, বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পক্ষে পদত্যাগ করেন। আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংসদের জন্য একটি সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করে।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। শেখ হাসিনা যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তার মধ্যে দুটিতে হেরেছেন এবং একটিতে জয়ী হয়েছেন। পরাজয় মেনে নিয়ে তিনি দলীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের প্রস্তাব দিলেও দলীয় নেতাদের অনুরোধে বহাল থাকেন। ১৯৯৪ সালে একটি নিষ্পত্তিমূলক মোড় নেয়, মাগুরা-২-এর উপনির্বাচনের পর, যা ওই নির্বাচন প্রত্যক্ষ করতে আসা নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে জালিয়াতি ও কারচুপির মাধ্যমে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেছে। ১৯৯৪ সাল থেকে সংসদ বর্জনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে, আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের সংসদ সদস্যরা গণ পদত্যাগ করেন। সংসদ তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন বিএনপি ছাড়া সব বড় দলই নির্বাচন বয়কট করেছিল, যারা ফলস্বরূপ সংসদের সবকটি আসন জিতেছিল। হাসিনা এই নির্বাচনকে প্রহসন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামীলীগের ডাকে বাংলাদেশে ১৭৩ দিন হরতাল পালিত হয়। এই সময়ে সংসদ তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন বিএনপি ছাড়া সব বড় দলই নির্বাচন বয়কট করেছিল, যারা ফলস্বরূপ সংসদের সবকটি আসন জিতেছিল। হাসিনা এই নির্বাচনকে প্রহসন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। নতুন সংসদের পুরোটাই বিএনপির সদস্যদের নিয়ে গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করতে সংবিধান সংশোধন করে। ১৯৯৬ সালের জুনের সাধারণ নির্বাচন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের জুন থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সে সময় গঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী ভারতের সাথে ৩০ বছরের জন্য একটি জল-বন্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, আজও পর্যন্ত বাংলাদেশ সুফল পায়নি। তার প্রশাসন ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে, হাসিনার প্রশাসন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহের অবসান ঘটায় যার জন্য হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন, যদিও ওদের রেভিনিউ (খাজনা-ট্যাক্স) ওদের, ওদের কর্মচারি ওদের। ওখানে কখনো সরকার করতে চাইলে উপজাতীয়দের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। যমুনা বহুমুখী সেতু ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্বোধনের মাধ্যমে কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু নামে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯৯ সালে, তার সরকার বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা এবং প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নতুন শিল্প নীতি শুরু করে। ১৯৯৯ সালে হাসিনা সরকার নতুন শিল্প নীতি গ্রহণ করে যার লক্ষ্য ছিল বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ লাভ করা, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা দলের এই পরাজয়ের জন্য তারই মনোনীত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদকে দায়ী করেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বেড়ে যায়। ২০০৪সালের মে মাসে আওয়ামী লীগের সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এরপর ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যার ফলে দলের মহিলা সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন দলের সমর্থক নিহত হন। মূলত সমাবেশটি ছিলো “সারা দেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের” প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। পরে অজ্ঞাত কারণে তড়িঘড়ি করে সমাবেশের স্থান সরিয়ে আনা হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে। সেই সময়ের ক্ষমতাশীন সরকার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করে এই বলে যে, জনসভার দিন হঠাৎ করেই কে, কেন, কার আদেশে, কি উদ্দেশ্যে পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়েই মুক্তাঙ্গন থেকে সমাবেশের স্থান সরিয়ে নেয়া হয়েছিল? তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করার বিষয়ে প্রস্তাব করা হলে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। একইবছর, সিলেটে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা হয়। ২০০৬ সালের অক্টোবরে, হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ লগি বৈঠা আন্দোলন শুরু করে, যেখানে আওয়ামী লীগের হাজার-হাজার কর্মী কয়েকদিন ধরে নৌকার লগি এবং বৈঠা নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন রাজপথ দখল করতে শুরু করে। ফলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে, ভাঙচুর, লুটপাটের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। ২০০৭ সালের মে মাসে, পুলিশ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করে। অন্তর্র্বতী সময়কাল সহিংসতা এবং ধর্মঘট ঘটেছিল। রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে আলোচনা করে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির নির্বাচনে সব দলকে নিয়ে আসেন। এসময়ের মধ্যেই দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করেন। ফলে শেষ দিনে মহাজোট সম্ভাব্য প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। নতুন ইস্যু হিসেবে ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি জানান।মাসের শেষের দিকে, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হন। রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমর্থনে ফখরুদ্দীন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এ সময়ের মধ্যে মাইনাস টু ফর্মুলার উদ্ভাবন ঘটে। ২০০৮ সালের ১১ জুন, হাসিনা চিকিৎসার কারণে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে যান অপরদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অনেক পীড়াপীড়ি করার পরও তিনি যেতে রাজি হননি। জনশ্রুত আছে যে, অবশেষে খালেদা জিয়াকে বলা হয়েছিল এ সময়ের মধ্যে সরকার যা করেছে তার সবকিছুর বৈধতা দিলে তিনি আবার ক্ষমতায় আসীন হতে পারবেন। কিন্তু বিএনপি চেয়ারর্পাসন এ প্রস্তাবে রাজি হননি।২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হাসিনা ৬ নভেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশে ফিরে এসেই তিনি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সাথে “মহাজোটের” ব্যানারে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট (মোট ১৪টি দল) ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৩০টি আসন পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের (৪-দলীয় জোট) উক্ত নির্বাচনকে “সংসদ নির্বাচনের মঞ্চ-ব্যবস্থাপনার” অভিযুক্ত করে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। মহাজোট নির্বাচিত হওয়ার পর, এরশাদকে রাষ্ট্রপতি করার জন্য জাতীয় পার্টির সাথে তার চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। ২০০৯ সালের বাংলাদেশ রাইফেলসের বেতন বিরোধে বিদ্রোহের আকারে একটি বড় জাতীয় সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যার ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ৫৬ জন নিহত হয়েছিল।এই বিদ্রোহের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করার কারণে সেনা কর্মকর্তারা হাসিনাকে দোষারোপ করেন। যদিও সেনা হত্যা নিয়ে সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত রিপোর্টে মোটামুটি উঠে এসেছিল সব কিছু। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সে তদন্ত রিপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। তবে অনলাইনের কল্যানে জনগণ সব জেনে গেছে ভেতরের গোপন কথা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক ও অফিসার জানে কেন এবং কী পরিকল্পনায়, কারা পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসার হত্যা করেছে।
২০১১ সালে, সংসদ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনটি বাতিল করে। ২০১১ সালে মধ্যম পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা তার বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা বন্ধ করা হয়েছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খবর দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জড়িত সেনা কর্মকর্তাদেরকে ইসলামী চরমপন্থী বলে বর্ণনা করেছে। ২০১২ সালে, তিনি একটি কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছিলেন এবং ২০১২ সালের রাখাইন রাজ্যের দাঙ্গার সময় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ২০১২ সালে, নোবেল বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে হাসিনার বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। একটি নরওয়েজিয় প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে একটি অনুমোদিত সংস্থায় অর্থ স্থানান্তরের সমালোচনা করা হয়েছিল। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচারিত হওয়ার পর ইউনূস টাকা ফেরত দেন কিন্তু এটি বাংলাদেশের সরকার ও মিডিয়ার দ্বারা গ্রামীণ ব্যাংকের তদন্ত বৃদ্ধি করে। আদালতের রায়ে ইউনূস তার গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তিনি হাসিনা ও অন্যান্য বাংলাদেশী রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেন। হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি বুঝতে পারছেন না কেন ইউনূস তাকে দোষারোপ করেছেন যখন আদালতের রায় তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এই মেয়াদে, তার সরকার নেতৃত্বে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সফল হয়, যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকার, আল বদর এবং আল শামস কর্তৃক সংঘটিত বাংলাদেশ গণহত্যার সাথে জড়িত সন্দেহভাজনদের তদন্ত ও বিচার করা হয়, যদিওবেশিরভাগ প্রমান তথ্য প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

গণভোট ব্যতিরেকে একচেটিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা বাতিল করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ১৫৩টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতসহ মোট ২৬৭টি আসন নিয়ে এবং বাকী আসনগুলো জোটবদ্ধদের ভাগ করে দেয়া হয়। ঠিক সেই সময়ে বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতার বাসভবনের সামনে বালুর ট্রাক রেখে একপ্রকার গৃহবন্ধি করে রাখে। অন্যায্য পরিস্থিতি এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্দলীয় প্রশাসনের অভাবের কারণে বেশিরভাগ নেতৃস্থানীয় বিরোধী দলগুলি নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিতর্ক সত্ত্বেও হাসিনা সরকারি ও বিরোধী হিসেবে এরশাদের জাতীয় পার্টির (যারা ৩৪টি আসনে জয়ী) সাথে সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনের সময়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সরকারকে বাধ্য করার প্রয়াসে বিক্ষোভ করেছিল। অপরদিকে সরকার জঙ্গী তৎপরতার তকমা দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বশে আনে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সমর্থস পেয়ে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তার কাজের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে কৃতিত্ব ও প্রশংসা পেয়েছেন। ২০১৮ সালে, হাসিনার সরকার বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস করেছিল, যার অধীনে ইন্টারনেট বা অন্য কোনও মিডিয়াতে সরকারের দ্বারা অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত যে কোনও সমালোচনা বিভিন্ন মাত্রার কারাদণ্ডে দণ্ড প্রদান করা হতে পারে। জনগণের বাকস্বাধীনতাকে দমন করার পাশাপাশি বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। জিয়া পরিবারের সদস্যদের ২০০৮ সালে এক এগারো সরকার কর্তৃক জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১৪ সালেঅভিযোগ গঠন করে এবং ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রায় প্রদান এবং পরবর্তীতে অজামিনযোগ্য দেখিয়ে কারাবন্দি করা হয় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে। বিএনপি-র শীর্ষস্থনীয় নেতৃবৃন্দের অভিযোগ ছিল একই সময়ে শেখ হাসিনার নামেও মামলা ছিলো সেগুলো খালাসপ্রাপ্ত হয় কিভাবে?

বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দীর্ঘ প্রায় ২৯ বছর যাবৎ বন্ধ এবং সরকারের আগ্নাবহ রাজনৈতিক দল ব্যতিত কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এ সরকারের অধীনে ছোটখাটা কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না ঠিক তখনই ২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ডাকসু নির্বাচনে ক্রীয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠন অংশগ্রহণ করে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দাপটে যদিও তারা নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চালাতে ব্যর্থ হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েও এর কোন ফল পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যদিয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে নুরুল হক নুর ১১ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে এবং আক্তার হোসেন সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে নুরুল হক নুরসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়। পরবর্তীতে অনেক চড়াই ঊতরাই পেরিয়ে সৃষ্টি হয় আরেকটি রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ। এ দলের সভাপতি নুরুল হক নুর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ। এই সময়ের মধ্যে তাদেরকে সরকার কর্তৃক বার বার নির্যাতন করা হয় এবং বন্দি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূলহোতা সন্দেহে বন্দি করে নির্যাতন চালানো হয় নুরুল হক নুরের উপর।

চতুর্থবারের মতো(২০১৯-২০২৪) এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রহসনের নির্বাচন করে জয়ী হন হাসিনার জোট, যেখানে তার দল আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টি ড্যামিভাবে জিতেছিল। প্রধান বিরোধী জোটের নেতা কামাল হোসেন ভোটকে ‘প্রহসনমূলক’ ঘোষণা করে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। দিনের ভোট আগের দিন রাতেই ব্যালটে সীল মেরে সম্পন্ন করে রাখে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এই নির্বাচনকে দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। নির্বাচনের আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য অধিকার সংস্থাগুলো সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অভিযোগ তুলেছিল। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় বোর্ড নির্বাচনটিকে প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করেছেন, সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে সম্ভবত হাসিনা ভোট কারচুপি ছাড়াই একচেটিয়া নির্বাচনে জয়লাভ করতেন এবং কেন তিনি তা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৎকালীন সরকার এধরনের অভিযোগোর তোয়াক্কা না করেই সরকার পরিচালনা শুরু করে। এই সময়ের মধ্যে প্রায় দুই বছর বিশ্বজুড়ে কোভিড মহামারী হওয়ায় বিরোধী মতের আন্দোলন মুক্ত থাকে। তাছাড়া কোভিড আক্রান্ত এবং অসুস্থ খালেদা জিয়া তখন কারাবন্দি অবস্থা থেকে নির্বাহী আদেশে নিজ বাসভবনে বন্দি অবস্থা ও হাসপাতালে বেশিরভাগ সময় চিকিৎসা নিতে থাকেন। চিকিৎসকগণ তখন বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য বলে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলেও আদালতের ই্স্যু দেখিয়ে সরকারের নির্বাহী কর্ণপাত করেননি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, হাসিনা সরকার গোয়েন্দা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে “রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ্র প্রকাশ করার অভিযোগে ১৯১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ঢাকা জেলা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের তারেক রহমানের মালিকানাধীন দৈনিক দিনকাল বন্ধের নির্দেশ দেয়। যার ফলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদলসহ অন্যান্য দলগুলো বয়কট করে। এই নির্বাচনে ৫% ভোটার উপস্থিতির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২২৪টিতে জয়ী হলে হাসিনা তার টানা চতুর্থ মেয়াদে (২০২৪) একচেটিয়া জয়ী হন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন এবং সরকার গঠন করেন।সরকার গঠন করলেও বাংলাদেশে ডলার সংকট, রির্জাভ সংকট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সব মিলিয়ে একটা রেড এলার্ট পরিস্থিতি ঘোমটভাব অবস্থায় ছিলো। তদুপরি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করছে। তার সঙ্গে আছে সরকারি আমলা ও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির পাচারকৃত অর্থ। যেসব অর্থ দিয়ে দেশে দেশে তৈরী করেছে অর্থবিত্তের পাহাড়। দুর্নীতিকে সহজীকরনের জন্য মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে কোনো কোনো পণ্য আমদানি করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান জিএফআইসেই প্রকাশ করে আসছে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে (২০০৯-২০১৮) ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। কয়েক বছর আগে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশে খেলাপি আড়াল করা হয়েছে। কেননা প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। তাদের বক্তব্য, সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ হবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এত সংকটের মধ্যেও যখন একতরফা নির্বাচন হয়ে গেলো তখন প্রধানমন্ত্রী ফান্ড কালেকশন জন্য বিভিন্ন দেশে ছুটাছুটি শুরু করলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সভা মিডিয়ার সামনে উল্লেখ করলেন ভারতকে যা দিয়েছি, তারা সারা জীবন মনে রাখবে। তখনি জনমনে প্রশ্ন আসলো তিনি কি দেশে কোনো ক্ষতি করলেন? প্রধানমন্ত্রীর এই ছুটাছুটির মধ্যেই২০২০ সালের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তটি ৫ জুন ২০২৪-এ বাংলাদেশ হাইকোর্ট একটি রায় জারি করে যা সরকারী কোটা বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে এবং এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। এইভাবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগে কোটা পুনরুদ্ধার হয় এবং ৫৬ শতাংশ কোটা ফিরে আসে। দূর্বার গতিতে সারাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আন্দোলন জড়িয়ে পড়ে, কোটা পদ্ধতির সংস্কারেরসমর্থনে বিক্ষোভ শুরু হয়।

জবাবে হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন;
মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।

আন্দোলনের অবস্থা বিবেচনা করে সরকার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে।আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থার আদেশ জারি করে যা আপিল বিভাগ সরকারী আপিলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে। এ সময়ের মধ্যে সরকারপন্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় সর্বপ্রথম নিহত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সারাদেশে প্রায় ২০-২৫জন এবং ৪০০ আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আহত হয়। তীব্রতরপ্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভটি পরে সহিংস রূপ নেয়, যার ফলে ৮০০ জনেরও বেশি মৃত্যু ঘটেএবং ২০,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়। এরপর সরকার সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়, সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যাপক কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করে এবং দেশে পাঁচ দিন স্থায়ী কারফিউ জারি করা হয়।পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে কোটা পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বাতিল করে এবং সংস্কারের আদেশ দেয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তখন বিক্ষোভের সময় নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে এবং হাসিনার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য দায়ী কিছু মন্ত্রীদের পদত্যাগ দাবি করে। এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ বিক্ষোভকারীরা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি দিয়ে গণভবন ঘেরাও করার ঘোষণা করলে প্রতিহত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ করে, কিন্তু সেনা প্রধান ও অন্যন্যা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর প্রধানগণও অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে নেই এবং সম্ভব নয়। তারা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার জন্য বলেন তিনি তা প্রত্যাঙ্খান করেন। অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের সামনে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন বলে ঘোষণা করেন, যিনি পরে একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন, “আমি এখন দায়িত্ব নিচ্ছি এবং আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব এবং দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করতে বলব।

প্রায় ১৫বৎসর ক্ষমতায় থাকা একজন প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার এবং অবশেষে বিমানযোগে ভারতে পালিয়ে যান। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। হেলিকপ্টারটি ভারতের দিল্লির কাছাকাছি একটি বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সমাপ্তি ঘটলো ফ্যাসিবাদের। একঘোয়েমি শাষণ ছাত্র-জনতার কাছে বালি বাঁধের মত ক্ষণস্থায়ী, এটা সর্বজন প্রমানিত।

লেখকঃ এম এ হামিদ, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার কর্মী

দিগন্ত নিউজ/নয়ন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দিগন্তনিউজ.কম ’এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি- আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন Gmail Icon ঠিকানায়।
আজকের সর্বশেষ সবখবর
  • আপনার এলাকার খবর খুঁজুন

    খুঁজুন
  • Design & Developed by: BD IT HOST