বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক দখলের অভিযোগে এস আলম গ্রুপকে আইনের আওতায় আনার জন্য ‘যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে’ বলে মন্তব্য করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে গত ১৪—১৫ বছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ঋণ খেলাপির নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ছোট ছোট প্রকল্প থেকে মেগা প্রকল্পসহ সব ক্ষেত্রেই দুনীর্তির ছায়া ছিল। আমরা দেখেছি যিনি ঋণ খেলাপি, তিনিই কর খেলাপি আবার তিনিই অর্থ পাচারকারী ও দুনীর্তিবাজ। অতীতে দেশের বিচার ব্যবস্থা দুনীর্তিবাজদের প্রটেকশন দিয়েছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) এফডিসিতে ‘আর্থিকখাতের বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা’ বিষয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি অয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি।
সেলিম রায়হান বলেন, এস আলম ব্যাংক খাতকে পুরোপুরি ধসিয়ে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও নীতিগত দুর্বলতা ছিল। এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলম মাসুদ বিদেশে বসে আন্তর্জাতিক আদালতে সালিশি মামলার যে হুমকি দিয়েছেন তা ‘নৈতিকতা বিবর্জিত’ বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান।
সানেম এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, শাস্তি প্রদানের জন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ব্যাংক ধসিয়ে দেওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। তার এই হুমকিতে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনেক দুর্বলতা ছিল। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন হোটেলে বসে সুদ হার নির্ধারণ করে দিত। সেই সুদহারই বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নিত। কিছু কিছু আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা মিলে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল
দুর্নীতির কারণে অর্থনীতিতে ‘এক রকম ক্ষত’ তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে সানেম এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, আর্থিক খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশিত হলে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের নামও বেরিয়ে আসবে।
গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোতে নতুন পর্ষদ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক এসব ব্যাংক থেকে বহু টাকা নিয়েছে এস আলম।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সম্প্রতি একটি শিল্প গ্রুপের মালিক নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ করেছে। এস আলম গ্রুপের এই কর্ণধার বলেছেন, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কর্তৃক ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু সিঙ্গাপুর সরকার কোনো দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করে না। তাহলে নিশ্চয় তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন। তাই গোয়েন্দা সংস্থা ও সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে জানা দরকার জনাব সাইফুল আলম কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি কবে দেশ ছেড়েছেন। তখন কোন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।
কিরণ বলেন, যদি তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েও থাকেন, তারপরও যেহেতু তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সালিশি মামলা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাই তার বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, ব্যাংক দখল ও অর্থপাচারের অভিযোগের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।