চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এ-সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
মনে করা হচ্ছে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার অনুমতির জবাব দিতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন পুতিন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে ডিক্রিতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো।
মঙ্গলবার যুদ্ধের ১ হাজারতম দিবস পার করছে রাশিয়া-ইউক্রেন। আজকের দিনেই পুতিন তার দেশের পরমাণুনীতি হালনাগাদ করে এই ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পুতিনের মুখপাত্র এবং রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ।
নতুন এই ডিক্রিতে বলা হয়েছে, যেসব দেশের পরমাণু অস্ত্র নেই, তাদের যদি তৃতীয় কোনো দেশ বা পক্ষ এ ধরনের বিধ্বংসী অস্ত্র প্রদান করে— সেক্ষেত্রে সেসব দেশের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে রাশিয়া।
মঙ্গলবার মস্কোতে ক্রেমলিন কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, পরমাণু অস্ত্র নেই— এমন কোনো আগ্রাসী দেশের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ কোনো দেশ যদি জোটবদ্ধ হয়, তাহলে তা আর একক নয়, বরং যৌথ হামলায় পরিণত হয়। আর এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের নীতি অক্ষুণ্ন রেখে যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, আমরা সেটিই নিয়েছি।
পেসকভ আরও বলেন, রাশিয়া সবসময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার বিপক্ষে; আমরা শুধু আমাদের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে ইউক্রেন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে এই হামলা চালানো হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের কারণে সামরিক স্থাপনায় আগুন লেগেছে। তবে এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনও ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি গোলাবারুদ গুদামে আঘাত হানার কথা নিশ্চিত করেছে।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে এটিএসিএমএস ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার একদিন পরই এই হামলা চালালো ইউক্রেন। রাশিয়া এর আগে এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, এর ফলাফল হবে উপযুক্ত এবং বাস্তব। মস্কো আরও জানিয়েছে, হামলাটি স্থানীয় সময় ৩:২৫ মিনিটে করা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এবং তা ভূপাতিত করা অত্যন্ত কঠিন। ইউক্রেনের রুশ দখলকৃত এলাকায় এর আগে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলেও কিয়েভ এখন রাশিয়ার গভীর ভূখণ্ডে আঘাত হানার ক্ষমতা অর্জন করেছে।
এরআগে গত রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার জন্য অনুমতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই অনুমতির দুদিনের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারবিষয়ক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করলেন পুতিন।