দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নিজের খারাপ লাগার কথা জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা মানুষকে ধৈর্য ধরতে বলি। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে ধৈর্য ধরা কঠিন। এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেলে ছোট একটা ব্যাগে সামান্য বাজার পাওয়া যায়, তা আমিও টের পাই। কারণ, আমিও বাজারে যাই; দুঃখ লাগে। সাধারণ মানুষের জ্বালা আছে, তারা সেটা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, এটা এক দিনে হয়নি। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে পেঁয়াজ, চাল, সয়াবিন তেল ইত্যাদিতে শুল্কহার কমানো হয়েছে। অবশ্যই আলু ও পেঁয়াজের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে, যদিও তার অনেক কারণ আছে।
কিছু ব্যাংক দুরবস্থা কাটিয়ে ফিরে আসছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংক বড় ব্যাংক, এটা ভালোর দিকে যাচ্ছে, যদিও কিছু ব্যাংক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। সরকার কোনো ব্যাংক বন্ধ করবে না।
তিনি বলেন, আমাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) সাফল্যের সূর্য উদিত হয়েছে; আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। আমরা ছাপ রেখে যাব। কিছু সংস্কার করে যাব। পরবর্তী সময়ে যারা আসবেন, তারা বুঝবেন, এখান থেকে রাস্তা তৈরি করতে হবে।
কল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণে তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি আমাদের পীড়া দেয়। আরেকটা সমস্যা জ্বালানির দাম। আপনারাও জানেন আদানির (ভারতীয় কোম্পানি) একটা দাবি ছিল ৭০০ মিলিয়নের। আদানিকে ২০০ মিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের পাওনা বকেয়া ছিল, ওরা বলেছে সার দেওয়া বন্ধ করে দেবে। বকেয়া পরিশোধ করার পর এখন সার দিচ্ছে।
ব্যাংক ও বিমাখাতের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকগুলো বিমা কোম্পানি আছে গ্রাহককে প্রিমিয়ামের টাকা দেয় না, টাকা আত্মসাৎ করে। জীবন বিমা, সাধারণ বিমার সমস্যা আছে। এগুলো আমরা জানি। কিন্তু সমস্যাগুলো এত ব্যাপক, চট করে সমাধান করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ছিল বকেয়া পাওনা। এটিকে কমিয়ে এনেছি। এখন ৪০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পাওনা আছে। এক টাকাও রিজার্ভ থেকে খরচ করা হয়নি। আগে রিজার্ভ ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার, হুট করে ১২ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। আর্টিফিসিয়ালি রিজার্ভ দেখানোর চেষ্টা করা হয়। এগুলো অকল্পনীয় বিষয়।
বাজেটের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) কোন কোন প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাজেটের ব্যয় কমানো হবে। তবে সরকারি কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের বেতন-ভাতা আটকাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে এবং আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। আমরা একটি পায়ের ছাপ রেখে যাবো৷ আমরা এমন জায়গাগুলো দিয়ে হাঁটবো যেখানে রাস্তা তৈরির দিক নির্দেশ করবে৷ আমরা কিছু সংস্কার করে যাবো৷ পরবর্তীকালে যারা আসবেন তারা বুঝবেন যে এখান থেকে রাস্তা তৈরি করতে হবে৷ একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
এ সময় অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
