নিখোঁজ বিষয়ক অনুসন্ধান কমিশনে ১ হাজার ৬০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। এ অবস্থায় নিখোঁজ ঘটনার জন্য দায়ীদের শনাক্ত ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (৯ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা তার দপ্তরে আয়োজিত এক বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। বৈঠকে আরও কয়েকজন উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।তিনি বলেন, আপনারা যে কোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে আমরা তা প্রদান করবো।
এ সময় কমিশনের সদস্যরা জানান, তারা আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন সরকারকে প্রদান করবেন এবং এরপর বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করবেন।
বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানান, সরকার প্রয়োজনে কমিশনের মেয়াদ আরও দুই বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে এবং ভুক্তভোগীদের সুরক্ষায় আইনগত ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারি করবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৬০০টি অভিযোগ পেয়েছেন, যার মধ্যে ৪০০টি অভিযোগ পর্যালোচনা করেছেন এবং ১৪০ জন অভিযোগকারীকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
এ সময় একজন কমিশন সদস্য বলেন, অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে, অনেক মানুষ এখনো কমিশনের কাছে আসতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিশোধের আশঙ্কা করছেন। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা রিপোর্টকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
কমিশনের আরেক সদস্য জানান, তারা সন্দেহ করছেন যে, নিখোঁজের ঘটনা প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি হতে পারে। এছাড়াও তারা এসব ঘটনার অপরাধী এবং যারা নির্দেশ দিয়েছিল তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
কমিশনের সদস্য বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকে জেলে আছেন এবং কেউ কেউ এমনকি মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন হচ্ছেন, কারণ তাদের আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিছু নিখোঁজ ভুক্তভোগী ভারতের কারাগারে বন্দি আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কমিশনের সদস্যরা প্রমাণ সংরক্ষণে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন, যেখানে ভুক্তভোগীদের গোপনে রাখা হয়েছিল।
একজন কমিশন সদস্য বলেন- ‘অনেক ভুক্তভোগী বলেছেন, তারা বছরের পর বছর সূর্যের আলো দেখতে পাননি। নতুন দিন যে শুরু হয়েছে তারা তা বুঝতে পারতেন কেবল যখন তাদের নাস্তা পরিবেশন করা হতো।’
একজন সদস্য সরকারের কাছে অভিযুক্তদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা এবং সম্ভব হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করার অনুরোধ জানান।
বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অভিযুক্তদের তালিকা পাওয়ামাত্রই এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম কমিশনের অনুসন্ধানের ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশের এবং নিখোঁজ ঘটনার তত্ত্বাবধানকারীদের উন্মোচনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
বৈঠকে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, নূরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, নাহিদ ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।