দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।”
শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ (এসবি) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাকার পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম- ইআরএফ কার্যালয়ে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্নীতির সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, “দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।”
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওই সব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, অর্থপাচার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ- এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থপাচার রোধে বেশ কিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে। এছাড়া দুর্নীতি বন্ধে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্ট সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, “অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর ও অর্থ পাচার-উভয় পদ্ধতিতেই দেশ থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়। অনুমান করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে।”
অর্থনীতিবিদ নাঈম চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হাইজ্যাক (ছিনতাই) হয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে কীভাবে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সবার আগে মানসিকতা ঠিক করতে হবে।”দিগন্ত নিউজ/নয়ন