প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ এর বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগের লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের স্বাক্ষরে সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিন্নাতুন নেছা তাহ্মিদা বেগম।
বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়, “অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।”
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ’ আইন, অনুযায়ী সার্চ কমিটি যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।
আইনে বেধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম জমা দেবে এই কমিটি।
সেই তালিকা থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তাদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
এ আইনের অধীনে ২০২২ সালের নির্বাচন কমিশনই প্রথম নিয়োগ পেয়েছিল। সেই কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সাবেক আমলা কাজী হাবিবুল আউয়াল।আর কমিশনার হিসেবে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।
উল্লেখ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পুরো কমিশন।
শুরু থেকেই আউয়াল কমিশন ঘিরে ছিল নানা বিতর্ক। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলেও কমিশনাররা আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি বলে অভিযোগ ওঠে নানা সময়। কমিশনাররা নানা সময়ে বেফাঁস মন্তব্য করে হয়েছেন বিতর্কিত। সবশেষ ২০২৪-এর ডামি নির্বাচনের জন্যও এই কমিশনকে দায়ী মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
এই কমিশনের আমলে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে ভোটের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করায় আস্থা হারায় এই কমিশন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গেছে আউয়াল কমিশন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। সেই সংস্কার শেষে নতুন ইসির অধীনে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের তরফে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ন্যূনতম ঐক্যমতের’ উপর নির্ভর করছে নির্বাচনের ‘টাইমলাইম’।
সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়েছে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ের তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এবার আমরা ভুয়া নির্বাচন করব না। একটা অসাধারণ সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করব।