ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গত ২৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাতে পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩) লাইনচ্যুতর ঘটনার পর থেকে শিডিউল বিপর্যয়ে পরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে ঢাকায় আসা-যাওয়া করা ট্রেনগুলো ৫-৬ ঘণ্টা বিলম্বে চলছে এবং ২৫ অক্টোবর (শুক্রবার) তিনটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছিল।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি জানিয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান আজ সিলেটগামী আন্তনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং জামালপুরগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়েছে।
প্রতিদিন কমলাপুর স্টেশন হয়ে ১৮২টি ট্রেন চলাচল করে। অধিকাংশ ট্রেন শুধু একটি রেক দিয়ে চালানো হয়। ফলে একটি ট্রেন সময়মতো না ছাড়লে পরের ট্রেনটিও দেরিতে যায়। তবে রোববারের মধ্যে শিডিউল বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হলেও এ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কাছেও নেই সঠিক তথ্য।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে স্টেশন এলাকাতেই দুর্ঘটনায় পরে পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩)। রেললাইন ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ট্রেনের ৬টি বগি লাইন থেকে পড়ে যায়। এই ঘটনায় প্রায় দেড়শ মিটারের মতো রেলট্র্যাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় সাত ঘণ্টা পর লাইন ঠিক করা হলেও শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া সবগুলো ট্রেন ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে।
এদিকে পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের এই ঘটনা ঘটারও আগে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লোকাল ট্রেন গোপীবাগে লাইনচ্যুত হয়। সে সময় ঢাকা-খুলনা লাইনে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি সাধারণ সময়ের প্রায় আধাঘণ্টা বিলম্বে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। প্লাটফর্ম পার হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে ঝাঁকুনি অনুভব হয় এবং ট্রেনটি থামানো হয়। পরে নেমে দেখা যায় ট্রেনের বিভিন্ন কোচের মোট ৬টির মতো বগি লাইনচ্যুত হয়। দেখা গেছে লাইনের পাত ভেঙে গেছে৷ পরে চাকাগুলো নিচে পরে যায়। ট্রেনের গতি কম ছিল বলে কেউ আহত হননি।
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ফলে কমলাপুরে যাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী ও স্টেশনে ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার। শুক্রবার কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে যান মহাপরিচালক। এ সময় যাত্রীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। নিরুপায় মহাপরিচালক একপর্যায়ে বলে ওঠেন, ‘এখন কী আর করবেন, মারলে মারেন আমাকে।’ এদিকে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে রেলের অটোমেটিক অপারেশন কার্যক্রম। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেন ছাড়ার কারণে সময় লাগছে বেশি।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র বলেছে, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকা থেকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের রুটের সবগুলো ট্রেন আটকা পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্রেনগুলো গাজীপুরের জয়দেবপুর, পুবাইল ও টঙ্গী, নরসিংদীর জিনারদি ও ঘোড়াশাল; ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে আটকে থাকে শুক্রবার দিনভর। এতে অনেক ট্রেন প্রায় পাঁচ-সাত ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে শুক্রবার কিশোরগঞ্জগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, পঞ্চগড়গামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, জামালপুরের তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয় বলে জানান কমলাপুরের স্টেশনমাস্টার আনোয়ার হোসেন।
একই দিনে দু’টি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (রেল) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। এ বিষয়ে রেলওয়ে কমান্ড্যান্ট মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, কমিটিকে দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।