দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে শনিবার (১৯ অক্টোবর) ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবানের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তবে এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এই হামলা হলো।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, বাণিজ্যিক রাজধানী তেলআবিবের সিজারিয়ায় নেতানিয়াহুর বাড়িতে হিজবুল্লাহর তিন ড্রোন আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে দুটি প্রতিরোধ করা গেছে। একটি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আঘাত হেনেছে। তবে হামলার সময় নেতানিয়াহু, তার স্ত্রী এবং পরিবার সিজারিয়াতে ছিল না। এছাড়া এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলেও দাবি করেছে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
আরও পড়ুন— বিএনপি-জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু
আলজাজিরা ও সৌদি আরবের সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল আল-হাদাসকে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও নেতানিয়াহুর দপ্তর উভয়ই ড্রোন হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ড্রোনটি লেবানন থেকে ছোড়া হয়েছিল এবং এটি সরাসরি নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বাড়িতে আঘাত হেনেছে। এটি লেবানন থেকে ৭০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে নেতানিয়াহুর বাড়িতে আছড়ে পড়ে।
হামলার পর পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এছাড়া একই সময় তেলআবিবে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে।
হামলার সময় গিলিলত সামরিক ঘাঁটিতেও সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। তবে সেনাবাহিনীর পরবর্তীতে জানায় ড্রোনগুলো এই এলাকায় আসেনি।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হন ইয়াহইয়া সিনওয়ার। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, তারা সিনওয়ারকে হত্যার জন্য গাজায় ‘ঘর থেকে ঘরে’ তাঁকে ট্র্যাক করেছে এবং অবশেষে এক ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ শেষে তাঁকে হত্যা করেছে। সিনওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন ইসরায়েলি বাহিনীকে ফাঁকি দিতে। তবে হার মানতে হয় তাঁকে।
আইডিএফের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজার এই অঞ্চলে (যেখানে সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়) ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর ৮২৮তম ব্রিগেডের (বিসলাচ) সেনারা তিনজন সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করে হত্যা করে। দেহ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন— এজলাসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ড. আব্দুর রাজ্জাক
পরে পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, রাফাহ জেলায় ইয়াহইয়া সিনওয়ার এবং আরও দুই যোদ্ধাকে শনাক্ত করার পর হত্যা করা হয়েছে। হ্যাগারি বলেন, ‘এই তিনজন আশ্রয়ের জন্য এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাচ্ছিলেন। আমাদের সেনারা তাঁদের অনুসরণ করে এবং এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।’
গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে স্থল হামলা শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। এরপর থেকে ইসরায়েলের গভীরে ড্রোন ও রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহও।
এখন পর্যন্ত তারা যত হামলা চালিয়েছে সেগুলোর মধ্যে নেতানিয়াহুর বাড়িতে ড্রোন আছড়ে পড়ার বিষয়টিই সবচেয়ে বড়। যদিও নেতানিয়াহু ওই সময় বাড়িতে ছিলেন না বলে দাবি করা হচ্ছে, তবে তার বাড়িতে হামলার বিষয়টি হিজবুল্লাহর জন্য একটি ‘প্রতীকি’ জয় হিসেবে বলা যায়। কারণ নিরাপত্তার চাদরে বেষ্টিত নেতানিয়াহুর বাড়িতেও নিজেদের ড্রোন নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে সশস্ত্র এ গোষ্ঠী।