ফিল সিমন্স আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত হেড কোচের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে। ফিল সিমন্স ১৯৮৭ হতে ১৯৯ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছিলেন। এর আগে তিনি ২০১৭ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই বেশ কিছু গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। সেখানে জানানো হয়, লঙ্কান হেড কোচকে ছাঁটাই করতে যাচ্ছে বিসিবি। তার পর সংবাদ সম্মেলনে সার্বিক বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
ফারুক আহমেদ বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পরই হাথুরুসিংহেকে সরিয়ে দেওয়ার আভাস দিয়েছিলেন।
মূলত অসদাচরণের জন্যই হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘দুই তিনটি ঘটনা ঘটেছে, যেগুলি আসলে একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার জন্য খুব পীড়াদায়ক ছিল। পাশাপাশি এটা দলের জন্যও খুব একটা ভালো উদাহরণ ছিল না। সেগুলি বিবেচনা করে আজকে আমরা তাঁকে একটা কারণ দর্শাও নোটিশ এবং দায়িত্ব থেকে অব্যহতির চিঠি দিয়েছি।’
আরও পড়ুন— অবশেষে বরখাস্ত হলেন হাথুরুসিংহে
আগামী সপ্তাহেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের দুই টেস্টের সিরিজ শুরু হবে। সেই সিরিজের আগে ভারত সফর শেষে পরশু রাতে হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু ঢাকায় তাঁর আর থাকা হচ্ছে না।
মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে ফারুক বলেছেন, ‘বরখাস্ত করার আগে আমরা তাঁকে নিয়ম মেনে শোকজ নোটিশ করেছি। ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। এরপর আমরা বরখাস্ত করব। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত কোচ ফিল সিমন্স।’
গত বছর ভারতে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছিলেন বলে হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার যে একটা বড় ভূমিকা আছে তাঁর বরখাস্ত হওয়ার পেছনে, সেটাও স্পষ্ট ফারুকের কথায়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘একজন জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে আপনি কখনোই শারীরিকভাবে আঘাত করতে পারেন না। এটার শাস্তি সেটাই, যেটা এখন হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ফারুক আহমেদ বলেছেন, বর্তমান কোচের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছিলাম মানিয়ে নিতে। দুই-তিনটা ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছে মতো ছুটি কাটানো, জাতীয় দলের খেলোয়াড়ে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনা কোনওভাবেই এটা দলের জন্য ভালো উদাহরণ ছিল না। তাই তাকে ৪৮ ঘণ্টার শোকজ ও সাসপেনশন দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এটা স্থায়ী হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে এটা ছিল হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় অধ্যায়। প্রথমবার বাংলাদেশের কোচের দায়িত্বে ছিলেন ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝপথে তিনি ই–মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়ে সেবার হাথুরুসিংহে নিজেই কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেবার তাঁর সঙ্গে চুক্তি ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার মাসখানেক পরই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে।
আরও পড়ুন— যানজট নিরসনের উপায় খোঁজার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
সেই সময়ে আলোচনা ওঠে, কোনও ক্রিকেটার বা বোর্ড কর্তার সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের কারণেই হয়ত দেশ ছাড়েন তিনি। যদিও অনেক পরে এসে জানান, শ্রীলঙ্কার কোচ হওয়ার কারণেই সেই সময়ে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়েন তিনি।
২০২৩ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসেন শ্রীলঙ্কার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ৩৫ হাজার ডলারে তার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে। যে চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ পূরণ না করে এবারও বরখাস্ত করা হলো হাথুরুসিংহেকে।
দ্বিতীয় মেয়াদে হাথুরুর অধীনে ১০টি টেস্ট, ৩৫টি ওয়ানডে ও ৩৫টি টি–টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্টে হারজিত সমানে সমান—৫টি জয় ও ৫টি হার। তবে ওয়ানডেতে ফল ছিল হতাশাজনক—৩৫ ম্যাচে ১৩টি জয়, হার ১৯টি, ৩ ম্যাচে ফল হয়নি। টি–টোয়েন্টিতে ৩৫ ম্যাচের ১৯টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, হেরেছে ১৫টি, একটিতে ফল হয়নি।
কোচ হাথুরুসিংহেকে নিয়ে পুরোনো দ্বন্দ্ব বিসিবির নতুন বস ফারুক আহমেদের। ২০১৬ সালে দল নির্বাচনে হাথুরুর হস্তক্ষেপের কারণেই প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন ফারুক। বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার আগে একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য হাথুরু খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।’
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিসিবির সভাপতির চেয়ারে বসেই আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকার কথা জানান ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব নেবার প্রথম দিনেই হাথুরুকে বাংলাদেশ দলে না রাখার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
অভিযোগ আছে, প্রথম মেয়াদের মতো দ্বিতীয় মেয়াদেও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ‘ম্যানেজ’ করে চলতেন হাথুরুসিংহে। যে কারণে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবি, টি২০ বিশ্বকাপের সুপার এইটে হতাশাজনক পারফরম্যান্সেও কোচের কোনো দায় দেখেনি বিসিবি। ফারুক আহমেদ মনে করেন, হাথুরুসিংহে দেশের ক্রিকেটের কাঠামো নষ্ট করে দিয়েছেন।