ইসরায়েল লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। সোমবার (১৪ অক্টোবর) লেবাননের উত্তরাঞ্চলে খ্রিস্টান অধ্যুষিত শহর আইটুরে প্রথমবার হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের রেড ক্রস। এ হামলায় আরও চারজন আহত হয়েছেন। শহরটির মেয়র জোসেফ ট্র্যাড জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলের ওই এলাকায় যে বাড়িটিতে হামলা হয়, সেটি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো ভাড়া নিয়েছিল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান মূলত দক্ষিণ লেবানন, বেকা উপত্যকা ও বৈরুতের উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ ছিল। সোমবার ইসরায়েল ২৫টি গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের আওয়ালি নদীর উত্তরে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশনার মাধ্যমে ইসরায়েলি হামলা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার দক্ষিণ লেবাননের নাবাতিয়েহ এলাকায় তাদের এক হামলায় হিজবুল্লাহর অভিজাত রাদওয়ান ফোর্সের ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের কমান্ডার মুহাম্মদ কামেল নাইম নিহত হয়েছেন। তবে হিজবুল্লাহ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
সাম্প্রতিক এই সামরিক অভিযানের মধ্যেই ইসরায়েল ও দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘ বাহিনীকে অঞ্চল থেকে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন একই আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, শান্তিরক্ষীরা হিজবুল্লাহর জন্য মানবঢাল হিসেবে কাজ করছে। যা ইসরায়েল ও জাতিসংঘের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি করেছে। তবে হিজবুল্লাহ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন— জুলাই-আগস্টে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ কেন ঘোষণা নয়, রুল জারি
এর আগে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ইসরায়েলি ট্যাংক তাদের ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছে। যা সাম্প্রতিককালের ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মিত্ররাও এই অভিযোগ নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে শঙ্কা রয়েছে যে, ১ অক্টোবরের ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাতে পারে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলে মার্কিন সেনা পাঠানোর পাশাপাশি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করবে। কারণ ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রবিবার বিদেশি সাংবাদিকদের দক্ষিণ লেবাননে নিয়ে গিয়ে হিজবুল্লাহর একটি সুড়ঙ্গ দেখিয়েছে। এটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের অবস্থান ২০০ মিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতাচ নোরকিন বলেন, আমরা আসলে হিজবুল্লাহর একটি সামরিক ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে আছি, যা জাতিসংঘের কাছাকাছি।
ইসরায়েলের স্থল অভিযানের ঘোষণার পর থেকে তারা হিজবুল্লাহর বহু সুড়ঙ্গ, রকেট লঞ্চার ও কমান্ড পোস্ট ধ্বংস করেছে বলে দাবি করেছে। তবে এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল উভয়েই বলেছে, দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর বিস্তৃত সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক রয়েছে। এগুলো শত শত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা জানিয়েছে, এর আগে ইসরায়েলি হামলায় তাদের একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ক্যামেরা, যোগাযোগ সরঞ্জাম ও লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা হারিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল ইসরায়েলের হামলাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করে নিন্দা জানিয়েছেন। সোমবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইইউ সদস্যদের প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত এক বছর আগে আবার শুরু হয়, যখন গাজা যুদ্ধের সূচনালগ্নে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি অবস্থানে রকেট নিক্ষেপ করে। সম্প্রতি এ সংঘাতের তীব্রতা বেড়েছে এবং ইসরায়েলের দাবি, তাদের অভিযান লেবাননের উত্তরের অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হাজার হাজার বাসিন্দার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।