এভারেস্ট পর্বতমালায় গত মাসে পর্বতারোহীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করছিল। দলের এক সদস্য হঠাৎ জমাট বাঁধা একটি জুতায় হোঁচট খান। হিমবাহের বরফ গলে বেরিয়ে এসেছিল জুতাটি।
ধারণা করা হচ্ছে, এ জুতা অ্যান্ড্রু কমিন ‘স্যান্ডি’ আরভিন নামের একজন ব্রিটিশ পর্বতারোহীর। আজ থেকে শত বছর আগে ১৯২৪ সালের জুনে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে গিয়ে সঙ্গী জর্জ ম্যালোরিসহ হারিয়ে যান তিনি। এর পর থেকে আরভিনের খবরের অপেক্ষায় ছিল তার পরিবার। জুতাটি সম্ভবত তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাল।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রামাণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা দলের নেতৃত্বে ছিলেন সুপরিচিত পর্বতারোহী জিমি চিন। তিনি বলেন, জুতাটির ভেতরে একটি পায়ের খণ্ডাংশ ছিল। এ আবিষ্কারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জিমি বলেন, ‘এটি ছিল স্মরণীয় ও আবেগঘন মুহূর্ত।’
আরও পড়ুন— অবৈধ বসতি ছেড়ে পালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলিরা
আরভিনের ভাগনির মেয়ে জুলি সামারসের কাছে বিষয়টি এককথায় অসাধারণ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার গা হিম হয়ে গেছে…আমরা তাকে (আরভিন) খুঁজে পাওয়ার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’
জুতার ভেতরে থাকা পায়ের খণ্ডাংশ সত্যিকার অর্থে আরভিনের কি না, তা নিশ্চিত হতে এরই মধ্যে তার পরিবার ডিএনএ নমুনা দিয়েছে। তবে চলচ্চিত্রনির্মাতা দলটি অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী, জুতাটি আরভিনেরই। কারণ, জুতার ভেতরে যে মোজা পাওয়া গেছে তাতে সেলাই করে লেখা ছিল ‘এ সি আরভিন’।
চলচ্চিত্রনির্মাতা দলটি গত মাসে এভারেস্টের উত্তর দিক দিয়ে রংবুক হিমবাহ থেকে নেমে আসার সময় জুতাটি খুঁজে পায়। এর আগে ওই পথে তাঁরা একটি অক্সিজেনের বোতল পান। বোতলের গায়ে ১৯৩৩ সাল লেখা। ওই বছরই এভারেস্টে এক অভিযানকালে আরভিনের সঙ্গে থাকা একটি জিনিস পাওয়া গিয়েছিল।
জুতাটির সূত্র ধরে পাওয়া যেতে পারে পর্বতারোহণের বৈশ্বিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটির সমাধান। ১৯৫৩ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বুকে প্রথম পা রাখেন এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগে। কিন্তু এর ২৯ বছর আগেই আরভিন ও ম্যালোরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যেতে পারে জুতাটির সূত্র ধরে।
সূত্র: বিবিসি