তিনি ফেসবুকে এলাকার বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেনময়মনসিংহ সদর উপজেলার নিজ বাড়ির সামনে স্বপন কুমার ভদ্র (৬৮) নামের এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে সাগর নামে এক মাদক বিক্রেতা। নিহত সাংবাদিক স্বপন কুমার ময়মনসিংহের তারাকান্দা প্রেস ক্লাবের (একাংশ) সহসভাপতি।
শনিবার (১২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার নগরীর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের মাঝিপাড়ার টানপাড়া এলাকার নিজ বাড়ির কাছে এ ঘটনা ঘটে। তাকে ধারাল দা দিয়ে দুই কাঁধে, ঘাড়ে ও দুই হাতে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেছে।
ঘটনার পর হত্যাকারী সাগরকে গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পাছার গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন সাগর।
অভিযুক্ত সাগরের বাড়ি গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পাছার গ্রামে। কিন্তু বসবাস করতেন নগরীর শম্ভুগঞ্জ টানপাড়া এলাকার নানির বাড়িতে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় সাংবাদিকরা ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন এবং হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন— হাতিরঝিলে নারী সাংবাদিকের লাশ !
জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক স্বপন ভদ্র ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বজন ও নবকল্যাণ পত্রিকায় ফুলপুর ও তারাকান্দা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে কোনো গণমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন না। তবে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এলাকার বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। স্বপন কুমার ভদ্রের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছোট ছেলে রনি ভদ্র সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
স্বপন কুমারের ভাতিজা জুয়েল ভদ্র বলেন, “শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ বাসার সামনে বসে ছিলেন চাচা। ওই সময় তাকে মাথায় এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। বাঁ হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। চাচির (সবিতা ধর) চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।”
স্বপন কুমারের ভাগনে মানিক সরকার বলেন, “মাদক নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার কারণে আমার মামাকে হত্যা করা হয়েছে। কেনো লেখালেখি করেন, সে জন্যই রাগ ছিল। এ কারণে হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।”
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি সফিকুল ইসলাম খান জানান, স্বপন ভদ্র বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের রঘুরামপুর টানপাড়া এলাকায় পত্রিকা পড়ছিলেন। খবর পেয়ে ব্খাটে মাদকসেবী সাগর কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সাগরের মাদক বেচাকেনা নিয়ে সাংবাদিক স্বপন ভদ্র পত্রিকায় লেখালেখি করায় বছরখানেক আগেও মারধরের শিকার হয়েছিলেন। সেই বিরোধ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।