বরকত আরবি শব্দ। কোরআন-হাদিসের অনেক জায়গায় এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। বেশিরভাগ সময় মানুষ বিভিন্ন কাজে বরকত কামনা করেন। স্থান, কাল, পাত্রভেদে ‘বরকত’-এর অনেক অর্থ হয়ে থাকলেও প্রতিটি অর্থই কল্যাণের। বরকত বলা হয় ওই জিনিসকে যাতে মহান আল্লাহর কল্যাণ নিহিত থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, সংখ্যায় অল্প কিন্তু তা কল্যাণকর ও তৃপ্তিদায়ক। যাতে মনে প্রশান্তি থাকে, থাকে না কোনো হাহাকার। সংসারে বরকত লাভ হয়ে থাকে এমন কয়েকেটি কাজের কথা উল্লেখ করা হলো।
খোদাভীতি : মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাকে ভয় করলে তিনি বান্দার প্রতি বরকত বা কল্যাণ দান করেন। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ইমান আনত এবং খোদাভীতি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদের পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।’ (সুরা আরাফ ৯৬)
আল্লাহর নামে শুরু করা : হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন খাবার খায় আর যদি বিসমিল্লাহ বলে (আল্লাহর নামে শুরু করে) তবে শয়তান ওই খাবারে অংশগ্রহণ করতে পারে না। যেটুকু খাবার আছে তা (পরিমাণে কম হলেও) তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। অনুরূপভাবে কেউ যদি ঘরে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে তখনো শয়তান তার সঙ্গে ঘরে ঢুকতে পারে না। এভাবে বান্দা যখন সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে, তখন শয়তান সব কাজ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে সব কাজেই বরকত লাভ করা যায়।
আরও পড়ুন— নামাজে অমনোযোগীদের প্রতি তিরস্কার
কোরআন তেলাওয়াত করা : কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো খুবই জরুরি। কোরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং কোরআন অনুযায়ী জীবন গড়া ইসলামের দাবি। যে যত বেশি কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াবে তার জন্য ততবেশি বরকত নেমে আসবে। যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হবে, কোরআনের চর্চা হবে, কোরআনের ওপর আমল করা হবে, সে ঘরেই নেমে আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও কল্যাণ।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ লাভ করা যায়। এটি অনেক পরীক্ষিত একটি আমল। আত্মীয়স্বজন তথা মা-বাবা, ভাই-বোন তথা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। আত্মীয়দের কেউ খারাপ আচরণ করলেও তাদের সঙ্গে নিজ থেকে সুসম্পর্ক রাখা। প্রয়োজনে সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য করা। সাহায্য করতে না পারলে তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসবে বরকত ও কল্যাণ।
সকাল বেলা কাজ শুরু করা : দিনের শুরুতে কাজ আরম্ভ করা। যদি কারও অফিস বা ব্যবসার কাজ একটু দেরিতে শুরু হয় তবে নিজ ঘরের কাজ দিয়ে হলেও সকাল সকাল কাজ আরম্ভ করা। কেননা সকাল বেলার কাজে আল্লাহতায়ালা বরকত দান করেন। রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে সকালবেলায় বরকত দান করুন।’ সুতরাং কেউ যদি সকালের সময়টুকু ঘুমিয়ে থাকে তবে কীভাবে বরকত আসবে? এ কারণেই দিনের শুরুতে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ আরম্ভ করার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ করা জরুরি।
নামাজ পড়া : দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজ নিজে যেমন আদায় করতে হবে তেমনি পরিবারের অন্য লোকদের নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের নামাজের নির্দেশ দিতে হবে। কেননা এমন অনেকেই আছেন যে, নিজে নিয়মিত নামাজ পড়েন ঠিকই কিন্তু পরিবারের সদস্যদের নামাজের ব্যাপারে কোনো খোঁজ রাখেন না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন।’ (সুরা তাহা ১৩২)
আরও পড়ুন— বদনজর থেকে রক্ষায় বিশেষ আমল
আল্লাহর ওপর ভরসা করা : বরকত লাভের অন্যতম আমল হলো আল্লাহর ওপর ভরসা করা। মুমিন যত বেশি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে আল্লাহ ততবেশি তাকে সাহায্য করবেন। পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতি আস্থা, নির্ভরতা বা ভরসা যতি বেশি কমবে, সে ততবেশি অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। বিপদে অনেকেই আল্লাহর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন। অনেক সময় আল্লাহর প্রতি নানা মন্তব্যও শুরু করেন। তা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
ক্ষমা প্রার্থনা করা : জীবনে বরকত লাভের অন্যতম আমল হলো বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। এর কোনো হিসাব, সংখ্যা বা সময় নির্ধারণ করে করা যাবে না। বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই ক্ষমা প্রার্থনা করা কাম্য। পুরো ইসতেগফার বলতে না পারলে অন্তত এটুকু বলা ‘আসতাগফিরুল্লাহ’। ইসতেগফার পড়ার সময় এ বিষয়টি মনে অনুভব করা যে, সব অন্যায়-অপরাধ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
সালামের প্রচলন করা : সালামের ব্যাপক প্রচলন করা বরকত লাভের অন্যতম মাধ্যম। সালামের পুরোটাই হলো শান্তি, রহমত ও বরকতের দোয়া। জীবনে বরকত লাভের সহজ ও প্রচলিত এ আমলগুলোর প্রতি একটু খেয়াল রাখলেই বা যত্নবান হলেই জীবনে নেমে আসবে অবিরত রহমত ও বরকত। আল্লাহতায়ালা আমাদের সহজ এই আমলগুলো বেশি বেশি করার তওফিক দান করুন।