জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদ নিয়ে সচিবালয়ে হট্টগোলের ঘটনায় ১৭ জন উপ-সচিবকে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ ঘটনায় গঠিত কমিটি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি ৮ জনকে গুরুদণ্ড, ৪ জনকে লঘুদণ্ড ও ৫ জনকে তিরস্কারের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে তাদের নাম পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে নুরজাহান খানম, মোঃ নুরুল করিম ভূঁইয়া, মোঃ জসিম উদ্দিন, নুরুল হাফিজ, রেবেকা খান, মোঃ সাইফুল হাসান, মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন এবং মোতাকাব্বীর আহমেদকে গুরুদণ্ড দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। হাসান হাবীব, আব্দুল মালেক, মোঃ আঃ কুদদূস, মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে লঘুদণ্ড এবং মোঃ সগীর হোসেন, মোঃ হেমায়েত উদ্দীন, মোঃ মুনিরুজ্জামান, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোঃ তোফায়েল হোসেনকে শাস্তি হিসেবে তিরস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন— কুড়িগ্রামে নামছে পানি, জমির ফসল নিয়ে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ডঃ মোঃ মোখলেস উর রহমান বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর আমাদের মন্ত্রণালয়ে একটি আনরেস্ট (অসন্তোষ) হয়েছিল। সেটার জন্য এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এটার প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। তার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর আগে, গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দুই দিনে দেশের ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল করেন উপসচিব পর্যায়ের এসব কর্মকর্তারা।
এদিন দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কে এম আলী আযম ও জিয়াউদ্দিনের কক্ষে হট্টগোল করেন তারা। বিকেল ৩টায় বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তারা এ দুই যুগ্ম সচিবের কক্ষ অবরুদ্ধ করে রাখেন। কর্মকর্তাদের রোষ থেকে নিজেকে বাঁচাতে যুগ্মসচিব আলী আযম পাশের রুমের টয়লেটে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর সিনিয়র কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে তাকে বের করে আনেন।
এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ডঃ মোঃ মোখলেস উর রহমান বলেন, ১৭ জনকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনটি পর্যায়ে সাজেস্ট করা হয়েছে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আটজনের বিষয় বলা হয়েছে, তদন্তসাপেক্ষে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে গুরুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। চারজনের বিষয় বলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে বিধিবিধান অনুযায়ী লঘুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। আর পাঁচজনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাদের শাস্তি তিরস্কার দেওয়া যেতে পারে। তাদের সাবধান করা যাতে ভবিষ্যতে এটা না করে।
আরও পড়ুন— আশানুরূপ সাড়া মেলেনি, বাড়ানো হয়েছে দরপত্রের সময়
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা যখন এ বিষয়গুলো ফেস করেন তখন অনেকগুলো স্টেজ আছে, সেগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। একটা পর্যায়ে দেখা যায় অনেকের সংশ্লিষ্টতা ছিল, আবার অনেকের ছিল না। আবার অনেক সময় দেখা যায় নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। এরকম হয়ে গেলে অনেক সময় আমরা সেগুলো দেখি। এখন এ বিষয়গুলো প্রসেস করা হবে। কারণ জাতি, মানুষ জানতে চায়। আমি ডিসি হতে পারিনি, সেজন্য এরকম একটা আন্দোলন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে, এটা কেউ ভালোভাবে নেয়নি।
ডঃ মোঃ মোখলেস উর রহমান বলেন, আমাদের সিনিয়র কলিগরা নেয়নি, কলিগরা নেয়নি, আমাদের জুনিয়র কলিগরা নেয়নি সর্বোপরি আপনারা নেননি এবং সত্যি কথা বলতে কি, জনগণও ভালোভাবে নেয়নি। অনেকে বলছে এগুলো যদি কঠোর হস্তে দমন না করেন, ব্যবস্থা না নেন, আমাদের প্রশাসন ভেঙে পড়বে, শৃঙ্খলা থাকবে না। প্রশাসনের একটি বড় দিক হলো শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় যা যা করার… আমিও আইনের ঊর্ধ্বে না, আপনারাও আইনের ঊর্ধ্বে নন, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।