আইনশৃঙ্খলা কোনোভাবেই অবনতি হতে দেয়া যাবে না। যারা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভবিষ্যতে কেউ পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করলে তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে। এই সহিংস ঘটনায় যারা জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রাঙামাটির ঘটনা তদন্ত করতে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টিম গঠন করা হবে।রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাঙ্গামাটি রিজিয়নের প্রান্তিক হলে জেলার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের এ সভার আয়োজন করা হয়।
এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা উপস্থিত ছিলেন। পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
এর আগে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে রাঙামাটি আসেন তিন উপদেষ্টা। রাঙামাটিতে এসে রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের সম্মেলন কক্ষে সভা করেন।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ব্যাপী সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল আব্দুল আজিজ (অব.), পুলিশ মহাপরিদর্শক মাইনুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি, এনএসআই ডিজি আবু মোহাম্মদ সারোয়ার ফরিদ, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক জিওসি মেজর জেনারেল মো. মাইনুর রহমান, রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শওকত ওসমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান, চাকমা সার্কেলের চিফ রাজা দেবাশীষ রায়, বিজিবি রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আনেয়ার লতিফ খান, জেএসএস কেন্দ্রীয় সহসভাপতি উষাতন তালুকদার, জেলা সভাপতি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমাম সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা, বিএনপি জেলা সভাপতি দীপন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, পাংখোয়া সোস্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক রেম লিয়ানা পাংখোয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান, সিনিয়র আইনজীবী প্রতিম রায় পাম্পু, শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান, জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি হারুন রশীদ মাতব্বর, রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা, সিভিল সার্জন ডা. নুয়েন খীসা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিদ্যুৎ ত্রিপুরাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলন।
বৈঠক সূত্র জানা যায়, শুক্রবারের সহিংস ঘটনার অবস্থা বর্ণনা করে বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতৃবৃন্দ বলেন, মূলত গুজব ছড়িয়ে রাঙামাটির পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়। এ ঘটনায় বাইরে কোনো শক্তি কাজ করেছে। সভা সঞ্চালনা করেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান।
বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, পুলিশের মহাপরিদর্শক, রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার, চাকমা সার্কেল চিফ, সাংবাদিকদের পক্ষে সুশীল প্রসাদ চাকমা বক্তব্য দেন।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘আমরা সবাই সম্প্রীতি চাই। কোথাও যেন ছন্দপতন ঘটছে। ছন্দপতনে সবাই একটি শব্দ উচ্চারণ করেছেন, সেটি হলো ষড়যন্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাহির থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পেছনে কারা কলকাঠি নাড়ছে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। এ ঘটনার তদন্ত কমিটি করা হবে, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। যারা অশান্ত করার চেষ্টা করবে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’
এদিকে গতকাল শুক্রবার রাঙামাটি শহরের সহিংসতা ঘটনায় পরিবেশ এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বহাল রয়েছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট গণপরিবহন, নৌ যান চলাচল। মাঠে রয়েছে পুলিশ বিজিবি ও সেনাবাহিনী। কোথাও কাউকে জড়ো হতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলার বাহিনী।
শুক্রবারের ঘটনায় শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয়সহ, বনরুপা, দক্ষিণ কালিন্দপুর, বিজন সারনি, উত্তর কালিন্দপুর, হাসপাতাল এলাকাসহ একাধিক এলাকার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকদের বাইকসহ শতাধিক যানবাহনে আগুন দেয়াসহ ভাঙচুর চালানো হয়েছে রাঙামাটি জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়েও। ভাঙচুর করা হয় অফিসের যানবাহন।