দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পানি নিষ্কাশনের পথ রোধ করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় দীর্ঘদিন ধরে ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এতে ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে চাষাবাদ করতে না পারায় দশটি গ্রামের দুই শতাধিক কৃষকের বছরে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অথচ খাদ্য ভান্ডার খ্যাত এ জেলার উৎপাদিত ধান ও চাল সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয় কৃষকেরা বিষয়টি নিয়ে সুরাহা করতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে জাইকা (জাপান-আন্তর্জাতিক-উন্নয়ন-সংস্থা) প্রকল্পের অর্থায়নে প্রথম ধাপে ২০২০ সালে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার ক্যানেল নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৪৩ মিটার ক্যানেল নির্মাণ করা হয় ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে। ক্যানেলটি আবাদি জমির চেয়ে উঁচু হওয়ার কারণে তেমন কোনো কাজে আসছে না।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ক্যানেলটি আবাদি জমির চেয়ে উঁচু হওয়ার কারণে অল্প পরিমাণ পানি নিষ্কাশন হলেও এতে বেশির ভাগ ফসলি জমি এখনো জলাবদ্ধতায় অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। অপরিকল্পিত ক্যানেল নির্মাণের কারণেই এ অবস্থা। প্রতি মৌসুমে বিঘা প্রতি ২০-২৫ মণ ধান উৎপাদন হতো এসব জমিতে। সে অনুযায়ী এলাকার প্রায় ২ শতাধিক কৃষকের ১ হাজার ৫০০ বিঘা (৫০০ একর) জমিতে বছরে ৬০ হাজার মণ ধান উৎপাদন হতো। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, মহেশপুর, গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, গণিপুর, মহদিপুর, আড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, পলিপাড়াসহ ওই এলাকার দশটি গ্রামের ৫০০ একর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে অনাবাদি পড়ে রয়েছে। ফসলি মাঠজুড়ে কচুরি পানায় ভরে গেছে।
আরও পড়ুন— সড়ক দুর্ঘটনার কবলে মধুমিতা সরকার
কৃষকেরা জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এসব জমি তারা চাষাবাদ করতে পারছেন না। কিছু জায়গায় পানি কম থাকলে আমন মৌসুমে ধানের চারা রোপণ করলেও তা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে কেউ আর ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করেন না। বর্ষাকালের পানি ওই সব ফসলি জমিতে জমে থাকায় সারা বছর অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে। জমিগুলো অনাবাদি হওয়ায় কৃষকেরা বেচা-কেনাও করতে পারছেন না। তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
তাঁরা জানান, পানি নিষ্কাশনের পথ রোধ করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করাসহ অপরিকল্পিত ক্যানেল নির্মাণের কারণে জমি জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে সে সময় একটি ক্যানেল তৈরি করে। জমির চেয়ে ক্যানেলটি উঁচু হওয়ায় পানি ঠিকমতো বের হতে পারে না। বর্ষার পানি জমে সরা বছর জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাই এ নিয়ে উপজেলা পর্যায় থেকে আমাদের করণীয় তেমন কিছুই নেই। তবে জমি থেকে পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সার এবং বীজ দিয়ে সহায়তা করতে পারি।’
উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী (এলজিইডি) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। তবে ক্যানেলের সঙ্গে বড় পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, এ জন্য এলাকার সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মোঃ আল কামাহ্ তমাল বলেন, ‘আগে থেকে যেহেতু একটি পাকা ক্যানেল রয়েছে, সেটি এখন ভাঙা সম্ভব নয়, তাই সেখানে বিকল্প কিছু করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’