আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুর জেলার ৪টি সংসদীয় আসনের বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসছেন। ইতোমধ্যে সব আসনে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। যদিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জামায়াত ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা একদল-আরেকদলকে দোষারোপ করে ঈঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন।
এদিকে বিএনপির তৃনমূল পর্যায়ে নেতা নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা উপস্থিত থেকে নির্বাচনের প্রস্ততির বার্তা ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁরা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। কয়েকজন প্রার্থী এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ফেসবুকেও পছন্দের প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু করেছেন কর্মী-সমর্থকরা।
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়াম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম, জামায়াত প্রার্থী নাজমুল হাসান পাটওয়ারী, ইসলামী আন্দোলনের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি জাকির হাসেন পাওয়ারী। তাঁরা নিয়মতি দলীয় সভা, সমাবেশ, ঘরোয়া কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। জহিরুল ইসলাম রামগঞ্জ শহরে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন। শাহাদাত হোসেন সেলিম ও জহিরুল ইসলাম একাধিক অনুষ্ঠানে একে অপরকে ইঙ্গিত করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রেখেছেন।
এছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ন আহবায়ক মাহবুব আলমও এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও জামায়াত প্রার্থী এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়ার পক্ষে নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। রুহুল আমিন শারিরীক অসুস্থ থাকায় দলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক ও নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন। খায়ের ভূঁইয়া এলাকায় যাতায়াত ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এ আসনকে ‘খালেদার জিয়ার ঘর’ বলা হয়। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে খালেদা জিয়া এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। পরে দুইবারই উপ-নির্বাচনে তিনি আসনটি ছেড়ে দেন।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াত প্রার্থী রেজাউল করিম মাঠে রয়েছেন। তাঁরা দুইজনই অনেকটা প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সভা-সমাবেশ করছেন। এতে নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা রয়েছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও ওই প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জেলা কমিটির আহবায়ক অবঃ (অনারারি) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে।
এছাড়া গণ অধিকার পরিষদ এর জেলা আহবায়ক এ্যাড. নুর মোহাম্মদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে এই আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ জুন সদর উপজেলার আদিলপুর গ্রামে জামায়াত নেতা কাউছার আহম্মদ মিলনের মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতি, মিছিল করেছে। সেখানে এ্যানি চৌধুরী ও রেজাউল করিম পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন। নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে ফেসবুকেও পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দেয়। এরপর ১১ জুন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ফারুক হোসাইন নুরনবী পদত্যাগ করেছেন। বলাবলি হচ্ছে, কাউছার হত্যাকে কেন্দ্র করে ফারুক হোসাইন দল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনে বিএনপির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, জাতীয় সমাজতান্তিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশের উপদেষ্টা খালেদ সাইফুল্লাহ ও জামায়াত প্রার্থী এ আর হাফিজ উল্যা ভোটের মাঠে রয়েছেন। এরমধ্যে আশরাফ উদ্দিন ও খালেদ সাইফুল্লাহ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকায় স্ত্রী তানিয়া রব দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখছেন।
বিএনপি নেতা এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, ভোট কী মানুষ তা ভুলে গেছেন। বিএনপির তৃনমূল সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে প্রত্যক্ষ ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের নেতা নির্বাচন করছেন। এখানে কোন পুলিশ, র্যাব, সেনা বাহিনী নেই। এটি আমাদের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্ততি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ন আহবায়ক মাহবুব আলম বলেন, আমরা চাচ্ছি আগে প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার, বিচার ও জুলাই সনদ। তারপর হবে নির্বাচনের কার্যক্রম। আপাতত আমরা লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী এআর হাফিজ উল্যাহ বলেন, ইতিমধ্যে লক্ষ্মীপুরের ৪ টি আসনেই আমাদের প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। নিয়মিত আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, শুধু লক্ষ্মীপুর নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ বিগত ১৬-১৭ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচন নিয়ে আমাদেরও তৃনমূলে সাংগঠনিক প্রস্তুতি চলছে।
