বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন নদী হালদায় ফের ব্রুড (প্রজননক্ষম) কাতলা মাছের মৃত্যু হয়েছে। নদীর পানিতে বাড়তে থাকা দূষণ এবং এরোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এই মাছগুলোর মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা ও গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাস মুন্সিরহাট এলাকার নদী থেকে মাছ দুটি উদ্ধার করেন নদীর স্বেচ্ছাসেবক ও নৌ পুলিশের সদস্যরা। পরে এগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া মাছগুলোর মধ্যে একটির দৈর্ঘ্য ৩৮ ইঞ্চি এবং ওজন প্রায় ১৩ কেজি, অন্যটির দৈর্ঘ্য ৩৬ ইঞ্চি ও ওজন সাড়ে ৮ কেজি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও নদী গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীর পানি দূষিত ও জৈব বর্জ্যে ভারী হওয়ায় ব্রুড মাছগুলো শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল অবস্থায় এরোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ মাছের মৃত্যু বাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদের পর ফটিকছড়ির তেরপালি খালে গরুর চামড়া ফেলা হচ্ছে, যা নদীর পানির গুণগত মান নষ্ট করছে। একই সঙ্গে কাঁঠালিয়া খাল দিয়ে ট্যানারির ময়লা পানি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে কৃষি ও শিল্প বর্জ্য নদীতে মিশে পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন বলেন, মাছ দু’টি উদ্ধার করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক অনুমান, দূষণের কারণে পানিতে অক্সিজেনের অভাব হওয়ায় মা মাছ দু’টির মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ করে মা মাছ ডিম ছাড়ার সময় শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে, এই সময় দুঃস্থ পরিবেশে তারা সহজেই সংক্রমণের শিকার হয়।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির পর নদীতে ছোঁড়া জৈব বর্জ্য এবং ট্যানারি থেকে আসা দূষণ নদীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য বড় ধরণের হুমকি। দীর্ঘমেয়াদে এ পরিস্থিতি হালদার মাছের প্রজনন ও টেকসই সম্পদ রক্ষায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৃত মাছগুলোর শরীরে চোখ ফোলা, ত্বকে লাল দাগ বা আলসার, পাখনার গোড়ায় পচন এবং পেট ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। এ ধরনের লক্ষণগুলো এরোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রধান চিহ্ন।
হালদা নদী বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীর এই অবনতি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন।
