পেশাদার ফুটবলে দিন দিন ব্যস্ততা বেড়েই চলছে ফুটবলারদের। উয়েফা ও ফিফার অর্থের প্রতি লোভের জেরে টানা খেলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। এই বছর ইউরো ও কোপা আমেরিকা হয়েছে। এরপর অলিম্পিকে খেলেছেন অনেকে। এখন ইউরোপে নেশনস লিগ চলছে, এরপর আবার বিশ্বকাপ বাছাই, এরপর বিশ্বকাপ। সেটা শেষ হতে না হতেই আবার ইউরো বাছাই হবে, নেশন লিগ, ইউরো… এই চক্র চলতেই থাকবে।
এর সঙ্গে ক্লাব পর্যায়েও উয়েফা শুরু করেছে আয় বাড়ানোর নানা পরিকল্পনা। চ্যাম্পিয়নস লিগে এ মৌসুমেই ম্যাচ বাড়ানো হয়েছে। ক্লাব বিশ্বকাপ এক সময় মাত্র ৬/৭ দল আর এক সপ্তাহের ব্যাপার ছিল। সেটাও ৩২ দলের এক বিশ্বকাপ বানিয়ে ম্যাচ বাড়ানো হচ্ছে। এর বাইরে ক্লাবগুলোর প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির নামে অন্য মহাদেশে ঘুরতে যাওয়া তো আছেই।
টুর্নামেন্টগুলোতে দল বাড়ছে, বাড়ছে ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবে ফুটবলারদের আগের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলতে হবে, বিশেষ করে যারা তারকা ফুটবলারদের। এর বাইরে জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচও বাড়ছে দিন দিন। ফলে ফুটবলারদের ছুটি কমে গেছে। অনেকে টানা ম্যাচের ধকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। তেমনই একজন ম্যানচেস্টার সিটির সুইস ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। ঠাসা সূচির ধকল সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনেকটা মজার ছলে ২৯ বছর বয়সী এ ডিফেন্ডার জানিয়েছেন, এ মৌসুম শেষে অবসরও নিতে পারেন তিনি।
আরও পড়ুন— ১৪ দিনে প্রবাসী আয় এলো ১৪ হাজার কোটি টাকা
আকাঞ্জি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে নাম লেখান ইংলিশ ক্লাবে। সেই থেকে ক্লাব ও দেশের হয়ে ১২৭টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সর্বশেষ মৌসুমের শেষ ম্যাচটা খেলেছিলেন ৬ জুলাই। সে ম্যাচে ইউরোর শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল সুইজারল্যান্ড।
সে ঘটনার দুই মাস পেরোতে না পেরেতোই নতুন মৌসুমে এখন পর্যন্ত সাতবার মাঠে নেমেছেন আকাঞ্জি। আগামী বুধবার আবারও মাঠে নামতে হবে আকাঞ্জিকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে ইন্তের মিলানের বিপক্ষে মাঠে নামবে সিটি। চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ, প্রিমিয়ার লিগ ছাড়াও ২০২৫ ক্লাব বিশ্বকাপেও অংশ নেবে ইংলিশ ক্লাবটি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হতে যাওয়া সে প্রতিযোগিতার শিরোপার লড়াই চলবে আগামী ১৩ জুলাই পর্যন্ত। এর ঠিক চার সপ্তাহ পরেই প্রিমিয়ার লিগের নতুন (২০২৫-২৬) মৌসুম শুরু হবে।
বিরতিহীন এ ঠাসা সূচি সম্পর্কে আকাঞ্জি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটা অনেক কঠিন। শুধু এ মৌসুম নয়, পরের মৌসুম নিয়েও চিন্তা করতে হবে। ধরা যাক আমরা (প্রিমিয়ার) লিগ কিংবা কাপ জিতলাম। এরপর ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে গেলাম। এর ঠিক তিন সপ্তাহ পরেই কমিউনিটি শিল্ড। তাহলে আমরা ছুটিটা পাব কখন?’
আকাঞ্জি যোগ করেন, ‘শীতকালে কোনো ছুটি নেই। ভাগ্য সহায় হলে (গ্রীষ্মে) আমরা দুই সপ্তাহ ছুটি পাই। এরপর আবার মৌসুম শুরু করতে হয়। তারপর পরের গ্রীষ্মে (২০২৬ সালে) আবার বিশ্বকাপ। এর (টানা খেলার) কোনো থামাথামি নেই।’
আরও পড়ুন— এশিয়ার শীর্ষ ভ্রমণ গন্তব্য: যেখানে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে
এতো খেলার ধকল কীভাবে সামলাবেন, সেটা জানা নেই আকাঞ্জির, ‘একটার পর একটা খেলা চলবেই। আমি জানি না সামনের বছরগুলোতে এগুলো কীভাবে চলবে। শুধু ম্যাচ বাড়ানোর কথা ভাবলে হবে না। চিন্তা করতে হবে, আগে কেমন ছিল। খেলোয়াড়দের কথাও ভাবতে হবে।’
বেশি ম্যাচ খেলায় ফুটবলারদের মধ্যে ক্লান্তি যেমন আসবে, তেমনি চোটের আশঙ্কাও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফুটবলারদের ওপর কেমন চাপ যাবে, সেটা বোঝাতে মজার ছলে অবসরের কথাও বলেছেন আকাঞ্জি, ‘অনেক কোনো সময় দেখা যাবে, আপনি এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন যে আর ম্যাচই খেলতে পারছেন না। এর বাইরে চোট তো আছেই। আমরা ফিট থাকতে যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করি। কিন্তু সেটার (ম্যাচ) একটা সীমা থাকা উচিত। (এভাবে চলতে থাকলে) আমি হয়তো ৩০ বছর বয়সেই অবসর নেব!’
এর আগে জার্মানির টনি ক্রুস ও বেলজিয়ামেরই কেভিন দি ব্রুইনাও খেলোয়াড়দের শুষে নেওয়ার দায়ে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সরাসরি দোষী করেছিলেন।