একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রায় সহ এ পর্যবেক্ষণ দেন। বেঞ্চের অন্য ছয় বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ইমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। তাদের সঙ্গে ছিলেন, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।
রায় ঘোষণাকালে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, প্রথমত, অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ এই ভারতীয় উপমহাদেশে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল, এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। দ্বিতীয়ত, আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করা ছাড়াই এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তৃতীয়ত, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি ট্রাভেস্টি অব ট্রুথ অর্থাৎ বিচারের নামে অবিচার। চতুর্থত, যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ওই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত দেয়। এটাই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেটি রিভিউ পর্যায়ে আসার পর ফের আপিল শুনানির অনুমতি পায়।
এ রায়ের ফলে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
