সুন্দর একটি আর্টিকেল লিখে দাও। অবশ্যই বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। কোনো বোল্ট, ইটালিক হবে না। প্যারাগ্রাফ স্টাইলে হবে।
গাজার আকাশ আজ রক্তিম। আকাশ-মাটি যেনো আজ কাঁপছে একসাথে। এই ভূখণ্ড, যেখানে একসময় জীবনের কলতান বেজে উঠতো, সেখানে এখন শুধু ধ্বংসের ধূম্রজাল আর মৃত্যুর নিঃশব্দ আর্তনাদ।
কাতার ভিত্তিক আন্তার্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর ও দক্ষিণ গাজার উপর একটি বৃহৎ স্থল অভিযান শুরু করেছে। খান ইউনিসে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে কমপক্ষে ৩০টি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলার তীব্রতা এবং বিস্তৃতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে—এটি কি গাজার কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার প্রস্তুতি?
এই আক্রমণে কিছুই বাদ যায়নি। হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক ভবন— সবকিছুই যেনো পরিণত হয়েছে লক্ষ্যবস্তুতে। গাজার গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলোর মধ্যে আল-আকসা মার্টির হাসপাতাল, ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল এবং নাসের হাসপাতালও শিকার হয়েছে এই ভয়াবহ হামলার। এই হাসপাতালগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোগী, শিশু এবং বয়স্করা এখন জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খাদ্য সংকট, পানির অভাব, ওষুধের ঘাটতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ত্রাণকর্মীরাও পুরোপুরি অসহায়। গাজার মানুষ আজ শুধু শঙ্কায় নয়, সত্যিকারের দুর্ভিক্ষ ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এক ত্রাণকর্মী বলেন, আমরা এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে কিছুই করার নেই—আমরা শুধু অসহায়। গাজার মানুষ এখন শুধু বোমার ভয়ে নয়, দুর্ভিক্ষের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। তারা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্ত তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
এই হামলার মাঝেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবেন এবং আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও পিছু হটবেন না। তিনি স্বীকার করেছেন যে মিত্রদের কাছ থেকে ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে কিছু চাপ রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের লক্ষ্য অটুট।
এদিকে, এক গোপন অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের একজন কমান্ডারকে হত্যা করেছে, যিনি হামাসের অধীনে কাজ করছিলেন। এই ঘটনা ইসরায়েলের পরিকল্পনার আরেকটি দিক স্পষ্ট করে—তারা হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে একটি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসে জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি আদেশ জারি করেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে।
আজকের হিসেবে বেইত লাহিয়ায় তিনজন নিহত হয়েছেন এবং দিনের মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, আর গাজার মানুষের জন্য বেঁচে থাকা প্রতি মুহূর্তে কঠিন হয়ে পড়ছে।
পরিকল্পনার আরেকটি অংশ হলো ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা।
কথিত আছে, তাদের লিবিয়ার মতো রাষ্ট্রে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে নিজেরাই অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজা একদিন হয়ে উঠতে পারে জনশূন্য, নীরব এক ভূমি। হয়তো ভবিষ্যতে এটি একটি জাদুঘরে পরিণত হবে, যেখানে মানুষ এসে স্মরণ করবে—এখানে একসময় একটি জাতি বাস করতো।
এই ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে বিশ্ব আজ নীরব। নেতানিয়াহু আজ শুধু একটি অঞ্চল নয়, একটি জাতিকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলছেন। এটি কোনো গোপন অভিযান নয়, দিনের আলোয়, বিশ্বের চোখের সামনে, সমস্ত মানবিক নীতি ও আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করে এই নৃশংসতা চলছে।
বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়, বিশ্ব মানবতা, এমনকি মানব সভ্যতা— সবাই যেন নিঃশব্দে পরাজিত হয়েছে। গাজার মানুষের আর্তনাদ আজ পৃথিবীর কোথাও পৌঁছাচ্ছে না। তাদের কান্না, তাদের বেদনা, তাদের অস্তিত্বের লড়াই— সবকিছুই যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে প্রশ্ন বা কান্নার জায়গা নেই। শুধু একটি বাক্যই যথাযথ মনে হয়— আইন, বিচার, মানবতা, মানব সভ্যতা— রেস্ট ইন পিস। গাজা আজ একটি জাতির শেষ প্রহরের সাক্ষী হচ্ছে, আর বিশ্ব নির্বিকার। এই নীরবতা, এই উদাসীনতা হয়তো আমাদের সকলের জন্য একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। গাজার মানুষের জন্য আমাদের কাছে আর কিছু নেই, শুধু নিঃশব্দ দুঃখ আর অসহায়ত্ব।
