স্মার্ট টেকনোলজিজ (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলামকে ঘিরে সম্প্রতি শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। গত ৪ এপ্রিল দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. কনক সরওয়ার তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে কনক সরওয়ার দাবি করেন, মোঃ জহিরুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছেন এবং রামগঞ্জে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ফেসবুক পোস্টে কনক সরওয়ার তাকে ‘পলাতক হাসিনা সমর্থিত বিএনপির নতুন কাণ্ডারী’ বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে মোঃ জহিরুল ইসলাম চীন সফরে গিয়েছিলেন। তার ভাষায়, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি আইসিটি প্রকল্পে প্রভাব খাটিয়ে স্মার্ট টেকনোলজির মাধ্যমে বড় অংকের প্রকল্পের কাজ নিয়েছেন জহিরুল। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) একটি প্রকল্প থেকে স্মার্ট টেকনোলজির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছে।
কনক সরওয়ারের দাবি অনুযায়ী, স্মার্ট টেকনোলজি শুধুই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করে না, বরং এটি একটি ‘সরকারঘেঁষা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’র অংশ। তিনি বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যু ও এরপর মোঃ জহিরুল ইসলামের রাজনৈতিক তৎপরতা এই বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। তার ভাষায়, জহিরুল ইসলাম নিজেই ঘোষণা করছেন, তিনি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
এই অভিযোগের জবাবে ৬ এপ্রিল বিকেলে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন মোঃ জহিরুল ইসলাম। তিনি সরাসরি কনক সরওয়ারের নাম উল্লেখ না করলেও, তার পোস্টটি যে সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা, তা স্পষ্ট। তিনি লেখেন, “কোনো ব্যক্তির অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আজকাল গুজব রটানো যেন খুব সহজ ও জনপ্রিয় উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি দাবি করেন, তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে দেশের প্রযুক্তি খাতে কাজ করছেন এবং স্মার্ট টেকনোলজির মাধ্যমে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানে রামগঞ্জ এলাকার প্রায় ৩০০ তরুণ কাজ করছেন। এছাড়া নারী প্রযুক্তিকর্মীদের এগিয়ে নিতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি, যার প্রমাণ—আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনেরও বেশি নারী কর্মরত রয়েছেন।” কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, প্রশিক্ষণ ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাও তার প্রতিষ্ঠানের অন্যতম অগ্রাধিকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিমা উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প ছিল, যেখানে প্রতিটি ধাপেই বিশ্বব্যাংকের নিরীক্ষা ও অনুমোদনের মাধ্যমে কাজ হয়েছে। তার ভাষায়, “বিশ্বব্যাংক যখন বলে ‘তোমার কাজে আমরা সন্তুষ্ট’, তখন বুঝতে হবে তারা সবকিছু যাচাই করেই বলছে।”
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেননি, তবে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তিনি জানান, “গত ২৭ বছর ধরে আমি ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে কাজ করেছি। এখন মনে হচ্ছে, সরাসরি মানুষের জন্য কাজ করার সময় এসেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তাকে রামগঞ্জে অগ্রসর হওয়া থেকে থামানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, “কাউকে হাত মিলিয়ে অভ্যর্থনা জানানো বা মঞ্চে একসঙ্গে উপস্থিত থাকা মানেই রাজনৈতিক পক্ষ নেওয়া নয়। এসব চিন্তা অতি সরলীকৃত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি রামগঞ্জের মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ এবং যে কোনো প্ল্যাটফর্মে থেকে জনসেবা করতে প্রস্তুত।
এই পুরো প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকেই কনক সরওয়ারের বক্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
উল্লেখ্য- স্মার্ট টেকনোলজিজ (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম নিজ এলাকা রামগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাাপক আত্ম-সামাজিক উন্নয়ন মুলক কাজ করে আসছেন।
