ইংল্যান্ডের উপকূলে নোঙর করা ছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য বিপুল পরিমাণ জেট ফুয়েল বহনকারী ট্যাংকার ‘স্টেনা ইম্যাকুলেট’। পরে এটির সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধায় ‘সোলং’ নামে একটি কার্গো জাহাজ। এতে উভয় জাহাজে আগুন ধরে যায় এবং ব্রিটিশ কোস্টগার্ডের নেতৃত্বে জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
বুধবার সিএনএন জানিয়েছে, ব্রিটিশ পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে এবং চরম অবহেলা করে দুর্ঘটনা ঘটানোর সন্দেহে সোলং জাহাজ থেকে ৫৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট রাস-এর এক মুখপাত্র সিএনএনকে নিশ্চিত করেছেন—যে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনিই ছিলেন জাহাজটির ক্যাপ্টেন এবং তিনি রাশিয়ার নাগরিক!
মুখপাত্র আরও জানান, জাহাজটির ক্রু সদস্যদের মধ্যেও রাশিয়ান ও ফিলিপিনো নাগরিক রয়েছেন।
আধুনিক নৌ প্রযুক্তি থাকার পরও এমন সংঘর্ষ কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ডের গ্রিমসবি ইস্ট বন্দরের প্রধান নির্বাহী মার্টিন বয়ার্স। তিনি বলেন, ‘এটি একটি রহস্যের মতো। কারণ বর্তমান সময়ে সব জাহাজেই উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে, যা চলার পথ নির্ধারণ করতে এবং যে কোনো বাধা চিহ্নিত করতে সক্ষম।’
বয়ার্স আরও বলেন, ‘সোলং জাহাজটি কীভাবে নোঙর করা ট্যাংকারের সঙ্গে ধাক্কা খেল? অবশ্যই কোনো সতর্কতা ছিল। রাডারে এটি শনাক্ত করার সুযোগ ছিল।’
সিএনএন জানিয়েছে, পর্তুগিজ পতাকাবাহী সোলং জাহাজটি সংঘর্ষের একদিন পরও জ্বলছিল। তবে স্টেনা ইম্যাকুলেট-এর আগুন গতকাল মঙ্গলবারের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসে।
ব্রিটেনের সামুদ্রিক পরিবহন মন্ত্রী মাইক ক্যান জানিয়েছেন, সোলং-এর এক নিখোঁজ ক্রু সদস্যকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। সোলং-এর বাকি ১৩ জন ক্রু সদস্য এবং স্টেনা ইম্যাকুলেট-এর ২৩ জন কর্মীকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। ‘স্টেনা ইম্যাকুলেট’ জাহাজটি ২ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল জেট ফুয়েল বহন করছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ক্রাউলি পরিচালিত ‘স্টেনা ইম্যাকুলেট’ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ‘ট্যাংকার সিকিউরিটি প্রোগ্রাম’-এর অংশ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য তরল জ্বালানি পরিবহন নিশ্চিত করা হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন ওশানু ইউকে সতর্ক করে বলেছে—যদি জেট ফুয়েল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে তবে এটি ব্যাপক পরিবেশগত ক্ষতি করতে পারে। তাদের মতে, এটি বন্যপ্রাণী এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য বিরাট হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
এ ছাড়াও ঘটনার দিন সোমবার সন্ধ্যায় কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সোলং জাহাজটি বিপুল পরিমাণ সোডিয়াম সায়ানাইড বহন করছিল। তবে মালিক প্রতিষ্ঠান ‘আর্নস্ট রাস’ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, জাহাজটি চারটি খালি কনটেইনার বহন করছিল, যেগুলোতে আগে বিপজ্জনক রাসায়নিক রাখা হয়েছিল।
